• হৃদরোগে মৃত্যু বাবার, দেড় মাসের মাথায় ডেঙ্গুতে প্রাণ হারাল ছেলে, সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত গাফিলতির অভিযোগ
    বর্তমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দেড় মাস আগে আচমকা মৃত্যু হয়েছিল স্বামীর। এই ঘটনায় মানসিকভাবে পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন মঞ্জু সাহা। তবে ১১ বছরের ছেলে রয়েছে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে কোনওরকমে নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন। শনিবার ছেলেরও মৃত্যু হল। শিশুটি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। তার আত্মীয়দের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় চূড়ান্ত গাফিলতি হয়। সে কারণেই এমন মর্মান্তিক পরিণতি।

    দক্ষিণ দমদমে ডেঙ্গু চোখ রাঙাতে শুরু করেছে। অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সৃজন সাহাও রেহাই পেল না এই মারণ রোগ থেকে। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনায় শহরে নতুন করে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। এই এলাকার অনেকে পুরসভার অনিয়মিত সাফাই কাজ নিয়েও প্রশ্ন তোলা শুরু করেছেন।

    সৃজনদের বাড়ি দক্ষিণ দমদম পুরসভার শ্যামনগর রোডের দাস ভিলা এলাকায়। শহিদ রামেশ্বর বিদ্যামন্দিরে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত সে। এক সেপ্টেম্বর তার জ্বর এসেছিল। চিকিৎসক দেখানো হয়। পাঁচ তারিখ, বৃহস্পতিবার হয় রক্ত পরীক্ষা। শুক্রবার সকালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট আসে। তাকে নাগেরবাজারে পুরসভার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক দেখার পর হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন। কিন্তু ভর্তির সময় হাসপাতালের কর্মীরা জানান, পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিকু) নেই। ইমারজেন্সি পরিস্থিতি তৈরি হলে অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে। সৃজনের মা ও আত্মীয়রা ওকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারপর তাঁদের অভিযোগ, ভর্তি নিলেও সঠিক চিকিৎসা পায়নি সৃজন। রাতে তার শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। চিকিৎসা পায়নি বলে শনিবার সকালে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সেখানেই বিকেলে মারা যায় শিশুটি।

    সৃজনের মা মঞ্জু সাহা বাকরুদ্ধ। ছেলেকে হারিয়ে প্রায় অপ্রকৃতিস্থ। হাহাকার করে কাঁদছেন আর বলে উঠছেন, ‘ছেলেটাকে আই ডি স্যালাইন পর্যন্ত দিল না। সরকারি হাসপাতাল একটু ভালো চিকিৎসা করলে আমার এ সর্বনাশ হতো না। আমি কি নিয়ে বাঁচবো?’ সৃজনের কাকিমা তুলসি সাহা বললেন, ‘সরকারি হাসপাতালের গাফিলতিতেই এই পরিণতি বাচ্চাটার।’

    দক্ষিণ দমদম পুরসভার সিআইসি সঞ্জয় দাস বলেন, ‘এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ।’ তিনি জানান, শুক্রবার পর্যন্ত চলতি বছরে মোট ৩২জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এই স্কুল ছাত্রটি ডেঙ্গুর প্রথম শিকার। পুরসভার হাসপাতালের পরিকাঠামো সমস্যার কথা সেখানকার কর্মীরা রোগী পরিবারকে জানিয়ে ভর্তি নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ভালো পরিকাঠামো যুক্ত আইডি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। 

    অন্যদিকে এই ঘটনায় দক্ষিণ দমদমজুড়ে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে নাগরিকদের মধ্যে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দাস ভিলা এলাকায় আবর্জনা সাফ করা হয় না। জল জমে। জায়গাটি ডেঙ্গুর আঁতুড়ঘর। ফি বছরই ডেঙ্গুর দাপট বাড়ে। পুরসভাকে বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।’ সিআইসি এ বিষয়ে বলেন, ‘সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)