এই সময়: তাঁরা র্যাগিংয়ে অভিযুক্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে দোষী সাব্যস্তও। ইউনিভার্সিটি তাঁদের শো-কজ় করার পর সেটিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। কিন্তু আইনজীবীর ফি মেটাবেন কী করে? সমস্যা নেই, মামলা চালানোর খরচ জোগাড়ে সহ-আবাসিকদের থেকেই টাকা তুলতে এই দোষী সাব্যস্তরা হস্টেলে জিবি বা সাধারণ সভা ডাকলেন বলে অভিযোগ!যে অভিযোগের সূত্রে ফের নজরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল। সেই মেন হস্টেল, যেখানে যৌনহেনস্থা ও র্যাগিংয়ের জেরে গত বছর অগস্টে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় যাদবপুরের বেশ কিছু ছাত্র ও প্রাক্তনী জেলবন্দি। বহু আলোচিত ঘটনাতেই এ বার বিতর্কের নতুন মাত্রা যোগ করল দোষী সাব্যস্তদের জিবি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, রবিবার রাতে তখন যাদবপুর ৮বি-তে আরজি করের ঘটনায় বিচার চেয়ে রাত দখল চলছে। সেই সময়ে জিবি বসে যাদবপুরের মেন হস্টেলে। সেখানেই দোষী সাব্যস্ত র্যাগাররা প্রস্তাব রাখেন — হাইকোর্টে যে আইনজীবী তাঁদের হয়ে মামলা লড়ছেন, তাঁর ফি বাবদ আড়াই লক্ষের বেশি টাকা বকেয়া পড়েছে। কোনওমতে দেড় লক্ষ টাকা জোগাড় করা গিয়েছে। এখন আবাসিকরা যদি বাকি টাকাটা দেন, তা হলে তাঁরা আইনজীবীর ফি মেটাতে পারেন!
বক্তব্য শুনে আকাশ থেকে পড়েন সাধারণ আবাসিকদের অনেকে। এক আবাসিকের কথায়, ‘এরা চিহ্নিত র্যাগার। শুধু গত বছরের ঘটনা নয়। এরা যে আরও কত জনের উপরে অত্যাচার চালিয়েছে, তার হিসেব নেই।’ প্রস্তাব অবশ্য আবাসিকদের বড় অংশই প্রত্যাখ্যান করেন বলে খবর। তাঁরা জানিয়ে দেন, এর আগে সহ-আবাসিকদের আচমকা বিপদে একাধিক বার চাঁদা তুলে অর্থ সংগ্রহ করে পাশে দাঁড়ানো হয়েছে।
কিন্তু এই র্যাগিং-মামলার সঙ্গে তাঁদের যোগ নেই। যাঁদের মামলা, তাঁদেরই টাকা মেটাতে হবে। হতোদ্যম হয়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষান্ত দেন দোষী সাব্যস্তরা। বলেন, ‘পরে আলোচনা হবে।’ যদিও এর পরেও কী নিয়ে আবার আলোচনা, সেটা স্পষ্ট নয়। এমন একটা দাবিতে জিবি ডাকা হয়েছে শুনেই ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায় মেন হস্টেলের সুপারকে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেন। হস্টেলে পৌঁছে জিবি করতে বারণও করেন।
কিন্তু আহ্বায়করা পাল্টা বলেন, ‘জিবি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সেটা করতে কেউ বাধা দিতে পারে না।’ এরপর জিবি বসে। সেখানে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তার উপরে নজর রাখেন সুপার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি ভাস্কর গুপ্ত বলেন, ‘খবর পেয়ে যা যা করণীয়, তা আমরা করেছি। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
গত বছর অগস্ট-সেপ্টেম্বরে রাজ্য উত্তাল হয়ে ওঠে যাদবপুরের ওই ছাত্রের মৃত্যু ঘিরে। ঘটনায় ১২ জনকে অ্যারেস্ট করেছে পুলিশ। র্যাগিংয়ের পাশাপাশি পকসো-তেও মামলা হয়েছে। প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িতরা বাদেও অনেকে দোষী সাব্যস্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে।
অথচ গত এক বছরে এই দোষীদের হস্টেল থেকে সরানো তো দূর, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই কর্তৃপক্ষ নেননি বলে অভিযোগ। সেই ভরসাতেই কি এখন টাকা তোলার প্রস্তাব দেওয়ার সাহস পেলেন এঁরা — উঠেছে প্রশ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি জুটা-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখের যে র্যাগিংয়ে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।’ ভিসির দাবি, ‘আইন অনুযায়ী দ্রুত শাস্তির জন্য যা যা করার, আমরা করছি।’
এসএফআই-এর রাজ্য সহ সভাপতি শুভজিৎ সরকারের অভিযোগ, ‘কতটা নৈরাজ্য এবং অপরাধের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হলে এতখানি সাহস পাওয়া যায়! এটা শাসকদলের মদত ছাড়া সম্ভব নয়।’ অভিযোগ অস্বীকার করে টিএমসিপি-র সহ সভাপতি সুদীপ রাহা বলেন, ‘রাত দখলের লড়াইয়ে এই র্যাগারদের নিয়ে তো এসএফআই মিছিল করছে। আমরা এদের সামাজিক ভাবে বয়কট করার পক্ষে।’