স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) ২০১৬ সালের পরীক্ষায় অনেকে নির্বাচিতই হননি। তা সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে হওয়া অগুনতি মামলায় এমন অনেকে নিজেদের নির্বাচিত বলে দাবি করছেন বলে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হওয়া আইনজাবীদের একাংশের পর্যবেক্ষণ। এর প্রেক্ষিতে এসএসসি-র আইনজীবী কুণাল চট্টোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারীদের আইনজীবীর কাছে ‘প্রকৃত’ মামলাকারী নিয়োগপ্রার্থীদের রোল নম্বর-সহ বিভিন্ন তথ্য চেয়ে ই-মেল করেছেন।যাতে কমিশন প্রত্যেক মামলাকারী ও তাঁদের দাবির যথার্থতা সম্পর্কে আগাম নিশ্চিত হতে পারে। শীর্ষ আদালতে পরবর্তী শুনানির আগেই সেই তথ্য না-পেলে মামলাকারীদের একাংশের সম্পর্কে তিনি সর্বোচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন বলেও জানিয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে গত ২২ এপ্রিল একলপ্তে ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছিল। যদিও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।
বিকাশ ভবন ও আচার্য সদনের কর্তাদের বক্তব্য, বহু মামলাকারী জানতেই পারে না যে, তাঁদের নামে আদালতে কোনও মামলা হয়েছে। অথবা মামলার ভিড়ে বহু অযোগ্য প্রার্থীকেও পিটিশনার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আগাম জানতে চাওয়া হলে এসএসসি রেকর্ড দেখে তাঁদের চিহ্নিত করে দিতে পারে।
বিশেষত, রোল নম্বর, নাম, জন্ম তারিখের মতো তথ্য। এই প্রসঙ্গে কমিশনের তরফে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে জনৈক পরীক্ষার্থী রতন সাহার (নাম পরিবর্তিত) কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি নাকি ২০১৫ সালের ১৬ অগস্ট হওয়া উচ্চ প্রাথমিকের টেট পরীক্ষা ওনিয়োগ পদ্ধতি সম্পূর্ণ সাজানো বলে জানিয়ে ও তার ভিত্তিতে আগের ডিভিশন বেঞ্চের নজরদারিতে যে প্যানেল তৈরি হয়েছিল, তা খারিজের আর্জি জানিয়ে মামলা করেছিলেন।
অথচ কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে (৮ জুলাই, ২০২১) এসএসসি-র গ্রিভ্যান্স সেলে তিনি হাজির হয়েছিলেন। যুগ্মসচিব পর্যায়ের আধিকারিকের সামনে রিজ়ন হিয়ারিংয়ের পর তাঁর নথি আপলোডের সমস্যার (১০৯৮) সমাধানও করেছিল কমিশন। তারপর ২০২২ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে তিনি ইন্টারভিউও দিয়েছিলেন।
এমনকী, গত বছর প্রথম দফার কাউন্সেলিংয়ে (৬ নভেম্বর-২ ডিসেম্বর) হাজির হয়ে নিজের পছন্দের স্কুলও বাছাই করেছিলেন। এসএসসি-র দাবি, এ রকম ‘ভুয়ো’ অভিযোগকারীদের শনাক্ত করতে ও হাইকোর্টের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে তাঁদের আইনজীবী (অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড) প্রকৃত মামলাকারীদের আইনজীবীদের ই-মেল করে ওই সব তথ্য চেয়েছেন।
এসএসসি-র আইনজীবীর ই-মেলে ‘এসএসসি সংক্রান্ত সব প্রয়োজনীয় তথ্য’ চাওয়া হয়েছে। ই-মেলে বলা হয়েছে, মামলার ফল যা-ই হোক, যে কোনও মূল্যে বিচার প্রক্রিয়ার পবিত্রতা বজায় রাখতে হবে। এসএলপি/ইন্টারভেনশন/ইমপ্লিডমেন্টের অ্যাপ্লিকেশনের শিরোনামের অনুলিপি পাঠাতে হবে, শুধু যেখানে আবেদনকারীরা নথির শুরুতে স্পষ্ট ভাবে নাম, এসএলপি/আবেদন নম্বর এবং তাঁদের নিজেদের রোল নম্বর উল্লেখ করেছেন।
যাতে এসএসসি ডেটা বা তথ্য যাচাই করতে সক্ষম হয়। আবেদন প্রার্থীর প্রকৃত অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা চিহ্নিত করা যায়। যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চর মামলাকারী মহম্মদ গোলাম গউস মণ্ডল বলেন, ‘যাঁরা সুপ্রিম কোর্টে এসএলপি করেছেন, তাঁরা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কি না, কমিশনের আইনজীবী সেটাই জানতে চেয়েছেন। কারা শিক্ষক, ওয়েটিং তালিকাভুক্ত আবার নট ইনক্লুডেড (নথি যাচাইয়ে ডাক না-পাওয়া) কেউ আছেন কি না, সেটা জানতে চাওয়া হয়েছে ই-মেলে।’