• তিন জেলার সীমান্ত দিয়ে দেদার পাচার পদ্মার ইলিশ
    বর্তমান | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • অভিষেক পাল, বহরমপুর: ‘রুপোর পাতে মারে ঘা, পানির বুকে ফেললে পা’। ইলিশ ধরার মরশুমে ওপার বাংলার জেলেদের বহুল চর্চিত এই ছড়ার মর্ম এবার এই বাংলায় একবারেই ফিকে। পুজোর আর এক মাসও বাকি নেই। বাঙালির প্রিয় পদ্মার ইলিশের আদৌ এপারে দেখা মিলবে কি না, সংশয় রয়েছে। ওপারের ইলিশ যেন বাঙালির পাতে ঘা মারছে। বাংলাদেশের রুপোলি শস্যের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে আছেন ভোজনরসিক বাঙালি। যদিও এবার পুজোর মরশুমে এপারে পদ্মার ইলিশ মিলবে না বলে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই চোরাপথে ভারতে ঢোকা ইলিশের উপর ভরসা করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। পুজোর জন্য এখন থেকেই শুরু হয়েছে ইলিশ মজুত। 

    ভারতে আমদানি বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশে দাম কমেছে ইলিশের। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিস্তীর্ণ সীমান্ত দিয়ে এপারে শুরু হয়েছে দেদার ইলিশ পাচার। রাতের অন্ধকারে নদীতে ভেলা ভাসিয়ে তার তলায় প্যাকেটে ও বস্তায় ইলিশ পাচার করা হচ্ছে। সীমান্তের নদী পথগুলিতে এখন ইলিশ পাচারের রমরমা। এই পাচার হয়ে আসা মাছ যত্ন করে গোডাউনে বড় বড় ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে। মাছ ব্যবসায়ীদের দাবি, দু’সপ্তাহ পর থেকে বাজারে মিলতে শুরু করবে পদ্মার বড় সাইজের ইলিশ। ভারতে ব্যাপক চাহিদা থাকায় মাঝে মধ্যেই দুই দেশের খোলা সীমান্ত এলাকায় আঁধার নামতেই ইলিশ পাচারের তোড়জোড় শুরু হচ্ছে।

    বিশ্বের মোট ইলিশ উৎপাদনের মধ্যে বাংলাদেশ হয় ৯৭.০১ শতাংশ। রাষ্ট্রসঙ্ঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন বা এফএও থেকে এমনই তথ্য মিলেছে। এপার বাংলায় দীঘা, শঙ্করপুর, কাকদ্বীপ কিংবা বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জে বর্ষায় যে পরিমাণ ইলিশ ওঠে, তা বাংলার বাজারগুলির চাহিদা কিছুটা মেটায়। গঙ্গা কিংবা রূপনারায়ণের মতো নদীগুলিতে যেটুকু ইলিশ মেলে, তা যৎসামান্য। এখন বাজারে যা মিলছে, তার বেশিরভাগ খোঁকা ইলিশ বা মায়ানমার থেকে আমদানি করা ইলিশ। চড়া দাম দিয়ে সেই ইলিশ কিনে হাত কামড়াতে হচ্ছে বাংলার মানুষকে। কারণ সেই স্বাদ মিলছে না। তাই এপার বাংলার মানুষকে ইলিশ দিয়ে রসনাতৃপ্তির জন্য ওপার বাংলার পদ্মার রুপোলি শস্যের উপর ভরসা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের ইলিশ এবছর পুজোর সময় কতটা আসবে বা আদৌ আসবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত। ফলে ইলিশ পাচারে জড়িয়ে পড়ছেন দুই পাড়ের ব্যবসায়ীরা। 

    বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাণী ও মৎস্য সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন, এবার ভারতে পাঠানো হবে না ইলিশ। আর তারপরেই পাচারকারীরা উঠে পড়ে লেগেছে পাচারের কাজে। 

    সাগরপাড়া বাজারের এক ইলিশ বিক্রেতা নাজমুল শেখ বলেন, মাঝেমধ্যে রাতের দিকে ওপার বাংলা থেকে এখানে মাছ ঢুকছে। যদিও সব মাছ অবৈধ উপায়ে আসছে। তাই অনেক দর হাঁকছে পাচারকারীরা। কিন্তু উপায় নেই আমাদের। বাজারে চাহিদা আছে। তাই আমরা সেই মাছ কিনে নিচ্ছি। বাজারে তাই একটু চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

    বহরমপুরের কোর্টে মার্কেটের এক ইলিশ বিক্রেতা বলেন, এখনও যা খবর পাচ্ছি, তাতে বাংলাদেশ থেকে বৈধ উপায়ে কোনও মাছ এপারে আসবে না। তাই এবারে পুজোর বাজারে ভরসা একমাত্র এই চোরা চালান। চোরাপথে যেভাবে মাছ আসছে, সেই মাছ আমরা কিছুটা জমিয়ে রাখছি। আর মাত্র তিন সপ্তাহ পরই পুজো। তারপর এই মাছ বাজারে তুলব।
  • Link to this news (বর্তমান)