• রেডিমেড পোশাকের কারণে করিমপুরে পুজোর আগেও রোজগার নেই দর্জিদের
    বর্তমান | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, করিমপুর: রেডিমেড পোশাকের চাহিদায় রুজিরুটি হারিয়েছেন দর্জিরা। সংসার টানতে অনেকেই অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। যাঁরা এখনও এই পেশায় রয়েছেন, পুজোর একমাস আগেও তাঁদের দোকানে ব্যস্ততা নেই। এই পরিস্থিতিতে পুজোর আগে দর্জিদের মন খারাপ।

    ২০বছর আগেও এমন পরিস্থিতি ছিল না। পুজোর একমাস আগে বিভিন্ন দর্জির দোকানে গ্রাহকদের ভিড় লেগে থাকত। শার্ট-প্যান্ট বানানোর জন্য কাপড় কিনে দর্জিদের দিয়ে যেতেন তাঁরা। অর্ডার বেশি হয়ে গেলে একসময় দর্জিরা অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিতেন। কিন্তু এখন বাহারি রেডিমেড পোশাকের কারণে টেলারিং শিল্পের দুরবস্থা হয়েছে বলে তাঁরা জানান।

    করিমপুরের প্রবীণ দর্জি প্রদ্যুৎ সরকার বলেন, আজকাল যুবক-যুবতীরা নিত্যনতুন ডিজাইনের রেডিমেড পোশাকের জন্য বড় শপিংমল বা দোকানে ভিড় করছেন। অনেক শপিংমল বা বড় দোকানের নিজস্ব দর্জিও থাকছে। জামাকাপড় বড় হলে সেখানেই কাটিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তার উপর এখন অনলাইনে অর্ডার দিলেই বাড়িতে পছন্দের পোশাক পৌঁছে যাচ্ছে। একসময় আমার দোকানেই পুজোর মরশুমে প্রায় একহাজার পিস জামা প্যান্ট তৈরি হতো। এখন সেই সংখ্যা কমতে কমতে একশোর নীচে এসেছে। আগে আটজন কর্মী আমার এখানে কাজ করতেন। এখন তাঁরা কেউ গাড়ি চালক, আবার কেউ দিনমজুরের কাজ করছেন।

    অপর দর্জি অখিল মিস্ত্রী বলেন, নানা ধরনের রেডিমেড পোশাকে বাজার ছেয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন নামী কোম্পানির বিজ্ঞাপন বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ক্রেতা টানতে দামে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট টাকার কেনাকাটায় ফ্রি গিফটের মতো অফারও থাকছে। ফলে এখন কিছু প্রবীণ মানুষ ছাড়া নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা আর দর্জিদের কাছে পোশাক বানাতে আসেন না।

    কলেজপড়ুয়া সৌমিক রায় বলেন, আগে দর্জির দোকানে গিয়ে জামাপ্যান্টের মাপ দেওয়া, পরে ট্রায়াল দেওয়ায় অনেক ঝক্কি ছিল। পোশাক পেতেও অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হতো। ঠিকঠাক ফিটিংস না হলে তো আরও সমস্যা। রেডিমেড পোশাকে সেই ঝামেলা নেই। করিমপুরের এক দর্জির স্ত্রী কণিকা মণ্ডল বলেন, বাচ্চা থেকে বয়স্ক-সবার জন্যই আগে জামাপ্যান্ট বানানোর অর্ডার মিলত। পুজোর দু’মাস আগে থেকেই দোকানে অর্ডার আসত। পুজোর সময় সেই পোশাক বানিয়ে দেওয়ার জন্য কর্মীরা নাওয়াখাওয়া ভুলে কাজ করতেন। সেসময় পুজোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। এখন আর সেই দিন নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)