নির্দিষ্ট ছকেই সূর্যাস্তের পর তড়িঘড়ি ময়নাতদন্ত, এজেন্সির অভিযোগ মানতে নারাজ স্বাস্থ্যদপ্তর
বর্তমান | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি করে ধর্ষিতা ও খুন হওয়া তরুণী চিকিৎসক ‘অভয়া’র দেহের ময়নাতদন্ত নিয়ে ‘চাপানউতোর’ শুরু হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের দাবি, সূর্যাস্তের পরে তড়িঘড়ি ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পিছনে সুনির্দিষ্ট ছক ছিল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মৃতদেহ ‘ডিজপোজ’ করাটাই ছিল মূল লক্ষ্য। যদিও স্বাস্থ্যদপ্তরের বক্তব্য, সমস্ত নিয়মকানুন ও বিধি মেনেই সম্পন্ন হয়েছে ময়নাতদন্ত। প্রতিটি ক্ষেত্রের যথাযথ অনুমতি নিয়েই তা করা হয়েছে।
তদন্তকারীদের বক্তব্য, তড়িঘড়ি ময়নাতদন্তের পরিকল্পনার পুরোটাই রূপায়িত হয়েছে তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও উত্তরবঙ্গের এক চিকিৎসকের অঙ্গুলিহেলনে। সূর্যাস্তের পরে ময়নাতদন্ত নিয়ে গত ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রক গোটা দেশের জন্য যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোসিডিওরর্স (এসওপি) নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল, তা লঙ্ঘন করা হয়েছে তরুণী চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে। এই অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এসওপি’র চার নম্বর বিধির উল্লেখ করছেন তদন্তকারীরা। যেখানে বলা হয়েছে, খুন, আত্মহত্যা (যা প্রচার করা হয়েছিল অভয়ার ক্ষেত্রে), ধর্ষণ, পচাগলা দেহ অথবা কোন সন্দেহজনক কারণে মৃত্যু হয়েছে, এমনক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা না হলে রাতে কোনও ময়নাতদন্ত করা যাবে না। গত ৯ আগস্ট আর জি কর চত্বরে সেরকম কোনও সমস্যা ছিল না বলেই খোঁজখবর নিয়ে জেনেছে সিবিআই। ক্রোনোলজি অনুযায়ী, ওইদিন ময়নাতদন্ত পর্বে অংশ নিতে বিকেল চারটে ১০ মিনিটে এসেছিলেন একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ছিলেন ভিডিওগ্রাফারও। বিকেল ৪টে ২০ মিনিট থেকে ৪টে ৪০ পর্যন্ত মৃতদেহের ‘এনকোয়েস্ট’ (সুরতহালনামা) হয়। বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় মর্গে। সন্ধ্যে ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হয় ময়নাতদন্ত, চলে প্রায় এক ঘণ্টা। রাত সাড়ে আটটায় মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয় পুলিসকে।
কেন তড়িঘড়ি ময়নাতদন্ত? স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের বক্তব্য, কোনও তড়িঘড়ি হয়নি। যাবতীয় নিয়ম মেনে সাঙ্গ হয়েছে ময়নাতদন্ত। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি ওইদিন তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসার পর একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছিলেন। আর জি করের ফরেন্সিক সায়েন্স মেডিসিনের অধ্যাপক ডাঃ অপূর্ব বিশ্বাসকে চেয়ারম্যান করে বোর্ডটি গঠন করা হয়েছিল। বোর্ডের বাকি দুই সদস্য হলেন আর জি করের ফরেন্সিক সায়েন্স মেডিসিনের অপর অধ্যাপক ডাঃ রিনা দাস এবং এন আর এস হাসপাতালের ফরেন্সিক সায়েন্স মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ মলি ব্যানার্জি। বিকেল ৫টার সময় তাঁদের উপস্থিত হতে বলা হয়। ওই সূত্রটি জানিয়েছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ওই নির্দেশিকাতেই তিন নম্বর বিধিতে বলা আছে, সন্ধ্যার পরে ময়নাতদন্ত কেবল সেখানেই করা যাবে, যদি কোনও মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্তের জন্য যথাযথ পরিকাঠামো থাকে। তবে হাসপাতালের ইন-চার্জকে নিশ্চিত করতে হবে, কোনওরকম ভাবেই তথ্যপ্রমাণ গুলিয়ে দেওয়া হবে না। সিবিআইয়ের বক্তব্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ওই বিধির সুযোগ নেওয়া হয়েছে। বিকেল চারটের পর ময়নাতদন্ত করার জন্য অনুমতি চেয়ে টালা থানার এক এসআই আর জি করের ফরেন্সিক সায়েন্স মেডিসিনের হেড অব দি ডিপার্টমেন্টের কাছে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন ফরওয়ার্ড করেন ওসি। হাসপাতালের ইন-চার্জ হিসেবে সন্দীপ ঘোষই ময়নাতদন্তের জন্য যথাযথ পরিকাঠামো আছে বলে নোটশিটে উল্লেখ করেছিলেন। তাঁর নির্দেশেই ময়নাতদন্ত হয়েছে। তথ্যপ্রমাণ মেটাতে এই পর্বে উত্তরবঙ্গের এক চিকিৎসক ‘হস্তক্ষেপ’ করেছেন বলে তদন্তকারীদের অভিযোগ।