• আন্দোলন কাড়ল ২ বৃদ্ধের প্রাণ, ‘জাস্টিস’ নিয়ে প্রশ্ন পিতৃহারাদের
    বর্তমান | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফের চিকিৎসা হয়রানি ও তার জেরে উঠল মৃত্যুর অভিযোগ। সেই সঙ্গে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে না পেরে একটি দরিদ্র পরিবারের নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার ঘটনাও প্রকাশ্যে এল। চিকিৎসকদের ‘জাস্টিস’ আন্দোলনের জেরে পিতৃহারা হওয়ার যন্ত্রণায় ক্ষুব্ধ পরিবার। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে না পেরে মৃত্যু হয়েছে হরিপালের সদানন্দ পালের (৬২)। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে হাতে পায়ে ধরেও চিকিৎসা মেলেনি। বাধ্য হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভিটেমাটি বন্ধক রেখে চিকিৎসা করাতে হয়। তাতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রাণও গিয়েছে। দাহকাজ মিটে গিয়েছে। কিন্তু ক্ষোভের আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে হরিপালের কৃষ্ণবাটির পাল পরিবারের সদস্যদের বুকে।

    একইভাবে ক্ষোভের আগুন পুড়ছেন নিউটাউনের বাসিন্দা উদিতা গঙ্গোপাধ্যায়ও। আন্দোলনের জেরে চিকিৎসা বিভ্রাটের কবলে পড়ে মঙ্গলবার সকালেই এসএসকেএম হাসপাতালে প্রাণ হারিয়েছেন উদীতাদেবীর বাবা বরানগরের বাসিন্দা উৎপল রায়চৌধুরী। কেউই কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি। কিন্তু দু’টি মৃত্যুই আরও একবার প্রশ্ন তুলে দিল ‘জাস্টিস’ আন্দোলনের মানবিকতা নিয়ে। 

    সদানন্দবাবুর ছেলে সৌমেন পাল বলেন, বাবাও চলে গেলেন, ধার করে চিকিৎসাও শেষরক্ষা হল না। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে কেউ বাবাকে ছুঁয়েও দেখেননি। কত আবেদন করেছি, আমরা খুব গরিব। একটু চিকিৎসা দিন। বারবার বলা হয়েছে, ডাক্তার নেই, চিকিৎসা নেই। অন্যত্র নিয়ে যান। শুধু বাবাকে বাঁচাতে বারাসতের বেসরকারি হাসপাতালে তিন লক্ষ টাকা দিয়েছি। বাবা বাঁচেননি। ডাক্তারবাবুরা চাইলেই বাবা একটু চিকিৎসা পেতেন। একটি আন্দোলনে আমরা সবদিক দিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। আমরা কার কাছে জাস্টিস চাইব? আর এক পিতৃহারা উদিতাদেবী বলেন, সোমবার রাতে উত্তরপাড়ায় বাবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। আমরা তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। একজন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের রোগীকে ভর্তি নিতে বিস্তর টালবাহানা করা হয়েছে। শেষপর্যন্ত ভর্তি হলেও বাবা বাঁচেননি। টালবাহানা কম হলে হয়তো বাবা বেঁচে যেতেন। একে জাস্টিস বলে?

    গত ১৮ আগস্ট পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন হরিপালের সদানন্দবাবু। তাঁর মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তাঁকে চুঁচুড়া থেকে রেফার করে দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে কল্যাণীতে নিয়ে যান। সেখানকার এইমস থেকে রেফার করে দেয়। তারপর তাঁর ছেলেরা তাঁকে নিয়ে যান কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অভিযোগ, সেখানে বলা হয় চিকিৎসক নেই। আবার মস্তিষ্কের চিকিৎসা মিলবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। পরিবারের অভিযোগ, রোগীর সামান্য চিকিৎসাটুকুও করতে রাজি হয়নি মেডিক্যাল কলেজ। বাধ্য হয়ে ১৯ আগস্ট রাতে বারাসতের একটি নার্সিংহোমে সদানন্দবাবুকে ভর্তি করা হয়। দশদিন পরে সেখানেই তিনি মারা যান। ততক্ষণে ভিটেমাটি বন্ধক পড়েছে দরিদ্র পাল পরিবারের। সদানন্দবাবু নিজে রেশন দোকানের কর্মী ছিলেন। তাঁর এক ছেলে কাঠের কাজ করেন, অন্যজন কাপড়ের দোকানের কর্মী। সরকারি হাসপাতালের সুবিধা না পেয়ে সেই পরিবারে এখন শুধুই হতাশা আর ঘাড়ে বিরাট ঋণের বোঝা। 
  • Link to this news (বর্তমান)