• সঙ্গী বস্তাবন্দি মুড়ি, মণ্ডপ গড়েই উপার্জন বিজয়দের, পুজোর সাজে সেজে উঠছে শহর  
    বর্তমান | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: বিকেল গড়িয়ে সময় তখন সন্ধ্যার পথে। কাঠের বাটামে পেরেক দিয়ে প্লাইউড সেট করার কাজ থেকে খানিক বিরতি। মাথায় বাঁধা গামছাটা খুলে তা ঝেড়ে নিয়ে মুখ-হাত মুছে একটু জিরিয়ে নেওয়া। মিনিট কয়েক পরেই হাজির এক গামলা মুড়ি। উপরে ছড়ানো চানাচুর। সঙ্গে বেশ কয়েকটি গোটা কাঁচা লঙ্কা। এক গাল মুড়ি মুখে দিয়ে বিজয় সামন্ত বললেন, এভাবেই তো এক মাস পার হয়ে গিয়েছে। সেই কবে পরিবার ছেড়ে কলকাতায় এসেছি কিছু টাকা উপার্জনের জন্য। বাড়ি ফিরব পুজোর পরে। মায়ের ঘরে আসার সময়ে আমরাই ঘরছাড়া। খারাপ তো লাগেই। কিন্তু পরিবারের বাকিদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য এটুকু কষ্ট তো করতেই হবে।’ 

    এই কথাগুলি শুধু একা বিজয় সামন্তর নয়, একই স্বর সৌমেন সামন্ত, গৌতম জানা, অমিত মাইতিদেরও। প্রত্যেকেরই বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে। গড়িয়াহাটের একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাবের মণ্ডপ তৈরি করছেন তাঁরা। খেজুরি থেকে কলকাতায় আসার সময় সঙ্গে এনেছেন বড় দুই বস্তা মুড়ি। ক্লাব প্রাঙ্গণে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। আর দু’বেলা রান্না হচ্ছে ভাত-তরকারি। গৌতম জানা বললেন, মণ্ডপ তৈরির কাজে এক মাসের উপরে কলকাতায় রয়েছেন ২০ জন কারিগর। পুজো না হলে খাব কি! আমাদের কাছে পুজোটাই আসল।

    দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা ইনকাম। বিজয়, সৌমেন, অমিত, গৌতমদের সঙ্গে দুর্গাপুজো অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িয়ে রয়েছে রুটিরুজির সন্ধান হিসেবেই। এই প্রান্তিক মানুষগুলির পাশে দাঁড়ানো সকলের নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করেন একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাবের কর্মকর্তা স্বপন মহাপাত্র। 

    পুজো আর মাত্র এক মাস দূরে। আগামী ২ অক্টোবর মহালয়া। ষষ্ঠী ৯ অক্টোবর। পুজোর গন্ধ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে শহরের এপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। হোর্ডিংয়ে থিম তুলে ধরছে বিভিন্ন ক্লাব। ফোরাম ফর দুর্গোৎসব বার্তা দিয়েছে, ‘চালচিত্র থাকলে খালি, ভালো কি লাগবে বাঙালির? বিচার জুড়োক মেয়ের ক্ষত, পুজো ফিরুক আগের মতো!’ ফোরামের সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, গোটা কলকাতায় হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে। দমদম পার্ক ভারতচক্র ক্লাবের পুজো কমিটির সন্দীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘আর জি করের ঘটনায় আমরা সকলেই সমব্যথী। এবারের পরিস্থিতিটা একটু অন্যরকম। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে, মায়ের দৈনন্দিন পুজো বন্ধ হয়ে যায়নি। তাই শাস্ত্র মতে ও নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে দুর্গাপুজো হবে।’ পুজো কমিটিগুলি বলছে, আর জি করের ঘটনায় আমরা দ্রুত সুবিচার চাইছি। পুজোর আগে বিচার হলে ভালো হয়। কিন্তু এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বহু মানুষের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। সবাই হয়তো শপিং মলে যান না। কিংবা অনলাইনে কেনাকাটা অপছন্দ। তারা হাতিবাগান বা গড়িয়াহাটে যান। সেই ছোট ব্যবসায়ীদের কথাও ভাবা দরকার।
  • Link to this news (বর্তমান)