এই সময়: আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের পর পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পদক্ষেপ ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বাদ পড়েনি ৯ অগস্ট নির্যাতিতার ময়নাতদন্তের বিষয়টিও। ওই দিন কখন ময়নাতদন্ত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সময় ধরে ধরে সে দিনের ঘটনাপরম্পরা আদালতে জানানো হয়েছে রাজ্যের তরফে।ওই ময়নাতদন্ত নিয়ে আবার নতুন বিতর্ক তৈরি হলো মঙ্গলবার প্রকাশ্যে আসা একটি নথিকে কেন্দ্র করে। ওই নথিতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশের কাছ থেকে বিশেষ নির্দেশ ছাড়া, শুধুমাত্র আরজি কর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিকেল ৪টের পরে ময়নাতদন্ত করতে চাননি তিন জন ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞের একজন।
সে দিন আরজি করের তৎকালীন উপাধ্যক্ষ তথা সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠ বিকেল ৫টায় নিহত চিকিৎসকের দেহের ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ লিখিত ভাবে প্রশ্ন তোলায় টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল বিশেষ নোট দিয়ে দেন ময়নাতদন্তের জন্য।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নানা প্রশাসনিক ও বৈজ্ঞানিক কারণে সাধারণত বিকেল ৪টের পর ময়নাতদন্ত করা হয় না। সুদূর অতীতে আলোর সমস্যা বড় অন্তরায় ছিল। পরবর্তী সময়ে সেই সমস্যা মিটলেও অল্প কিছু ফরেন্সিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য সূর্যালোকের অনুপস্থিতিও কিছুটা সমস্যা তৈরি করে।
তাই ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বিশেষ আদেশনামা ছাড়া অনেক সময়েই সূর্যাস্তের পরে শবদেহের ময়নাতদন্ত করতে চান না। গত ৯ অগস্ট আরজি করের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের পিজিটি-র ধর্ষণ-খুনের পর ময়নাতদন্তের জন্য যে বিশেষ কমিটি গড়ে দেন আরজি কর কর্তৃপক্ষ, তাতে বিকেল ৫টার সময়ে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। তাতেই প্রাথমিক ভাবে বেঁকে বসেন এক ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক।
মোট তিন জনকে রাখা হয়েছিল ময়নাতদন্তকারী দলে। ফরেন্সিক স্টেট মেডিসিনের প্রফেসর অপূর্ব বিশ্বাসের নেতৃত্বে সেই দলে ছিলেন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রিনা দাস এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মলি বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই আদেশনামার জবাবি প্রতিলিপিতে রিনা দাস নোট দেন, নির্দিষ্ট ভাবে পুলিশের তরফে কোনও নির্দেশ না পেলে বিকেল ৪টের পর তাঁর পক্ষে ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হবে না। এর সপক্ষে তিনি স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি নির্দিষ্ট আদেশনামার উল্লেখও করেন। যদিও এর পর সমস্যা কিছু হয়নি।
এই প্রসঙ্গে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, বিশেষ অর্ডার ইস্যু করতে যে তৎপরতা দেখানো হয়েছিল সে দিন টালা থানার তরফে, সরকারি স্তরে তেমনটা সাধারণত দেখা যায় না। এক্ষেত্রে এত দ্রুততা কেন? যদিও এ দিন পুলিশ বা স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্তারা এর ব্যাখ্যা দেননি।