এই সময়, কলকাতা ও কোন্নগর: জুনিয়র ডাক্তারদের লাগাতার কর্মবিরতির জেরে গত ক’সপ্তাহে পরপর রোগী মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে জোরালো প্রচারে নেমেছে তৃণমূল। মৃতদের পরিজন কী বলছেন, সে সংক্রান্ত ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে অভিযোগের পক্ষে প্রমাণও দিচ্ছে জোড়াফুল শিবির।আরজি করের ঘটনায় প্রতিবাদরত জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে ২৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে, সে পরিসংখ্যানও এক্স-এ পোস্ট করছেন তৃণমূলের নেতারা। আন্দোলনকারী ডাক্তাররা অবশ্য বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ মানতে নারাজ। কর্মবিরতি সত্ত্বেও মেডিক্যাল কলেজগুলিতে মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন — এই দাবির পক্ষে চিকিৎসকদের অনেকে আবার পাল্টা ভিডিয়ো পোস্ট করছেন।
মঙ্গলবার তৃণমূলের তরফে ফের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছে। হুগলির হরিপালের এক ব্যক্তির বক্তব্য রয়েছে সেখানে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে তাঁদের পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলে ভিডিয়োয় দাবি। যদিও এই ভিডিয়োগুলির কোনওটিরই সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’।
তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, ‘আমরা সবাই আরজি করের ঘটনায় ন্যায় বিচার চাই। কিন্তু বেশ কিছু হাসপাতালে কয়েক লক্ষ মানুষ বিনা চিকিৎসায় হয়রানির শিকার হয়েছেন। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অপারেশন বন্ধ।’
‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ সোমবার দাবি করে, ‘হাসপাতালে কিছু মৃত্যুর জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের দায়ী করা হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জন্য কোনও হাসপাতালের পরিষেবা ব্যাহত হয়নি।’
একটি পরিবারের বক্তব্য আবার সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে জানা যাচ্ছে, পরিবারটির এক সদস্য আরজি করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেও ট্রিটমেন্টে কোনও অবহেলা হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিবারের অন্য সদস্য।
চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে নথিভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা হাজার তিনেক। জুনিয়র ডাক্তাররা আছেন রাজ্যের ২৫টি মেডিক্যাল কলেজে। আর সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজ ৩৫টি। হিসেব কষলে দাঁড়ায়, রাজ্যের মোট হাসপাতালের ০.৫২ শতাংশে জুনিয়র ডাক্তাররা আছেন।
এঁদের সংখ্যা মোট চিকিৎসকের ০.৫ শতাংশ। হেলথ সেন্টার, জেনারেল হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল থেকে ইএসআই হসপিটালে জুনিয়র ডাক্তাররা নেই। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এঁরা কর্মবিরতি চালালেও অন্যত্র কাজ করছেন চিকিৎসকরা। এই পরিস্থিতিতে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ ঠিক নয় বলে চিকিৎসক সংগঠনগুলির বক্তব্য।
আরজি কর নিয়ে মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সোমবারই আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের কাজে ফেরার ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছিলেন। যদিও মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় সেই সময়সীমা পেরোলেও ডাক্তাররা এখনও পর্যন্ত অনড়। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ জোড়াফুল শিবিরের সর্বোচ্চ নেতৃত্বও বারবার আন্দোলনরতদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার এক্স হ্যান্ডলে তৃণমূলের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অভিষেক বলেছিলেন — ‘চিকিৎসকদের দাবি ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু আন্দোলন এমন ভাবে করা উচিত, যাতে চিকিৎসা পরিষেবা বিঘ্নিত না হয়।’ এর সঙ্গে কোন্নগরে পথ দুর্ঘটনায় নিহত বিক্রম ভট্টাচার্যের খবরও পোস্ট করেন অভিষেক। আরজি করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই তরুণ।
তৃণমূলের এক্স হ্যান্ডলে সোমবার বিক্রমের মা কবিতা দাসের বক্তব্যের মোবাইল কথোপকথনের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ফোনের অন্য প্রান্তে আছেন চিকিৎসকদের যৌথমঞ্চের আহ্বায়ক পুণ্যব্রত গুণ। তাঁকে উদ্দেশ করে বিক্রমের মা বলছেন, ‘আমি ছেলেটাকে নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা ছোটাছুটি করেছি। কোথাও ডাক্তার ছিলেন না। না ট্রমা কেয়ারে, না আউটডোরে। এখন ডাক্তারবাবুরা বলছেন, তাঁরা নাকি ওর চিকিৎসা করেছেন!
এটা বলতে গিয়ে এখন আমাকেও মিথ্যেবাদী বানাচ্ছেন তাঁরা।’ সেই বার্তালাপের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল। ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে জবাব আসে, ‘কোন্নগরে কোনও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল নেই? সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে সার্জেন রাখা সরকারের দায়িত্ব।’ কবিতা বলেন, ‘কোন্নগরে কোনও হাসপাতাল নেই।’ উল্টো প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘আপনার ছেলের যে চিকিৎসা করা হয়েছে, সেটা আরজি করের ভাইস প্রিন্সিপাল সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়ই বলেছেন।’
পাল্টা কবিতা বলেন, ‘দয়া করে স্যর এই মিথ্যে কথা বলবেন না। তিলোত্তমার মা যেমন তাঁর সন্তানের বিচার চান, আমিও আমার ছেলের বিচার চাই।’ যদিও গোটা বিষয়টি নিয়ে পুণ্যব্রত কোনও মন্তব্য করতে চাননি।