পুরুষ মানুষ ভাতের ফ্যান গালতে পারেন, মহিলারা রাতের অন্ধকারে ডান্ডা হাতে পাহারা দিতে পারেন, ছেলেরা হাউ হাউ কেঁদে ভাসাতে পারেন। মোদ্দা কথা চিন্তা-ভাবনায় অফুরান অক্সিজেনের জোগান। আরজি কর কাণ্ডের আবহে এ বার খুদেদের 'ইতিবাচক পৌরষ'-এর পাঠ দেওয়ার উদ্যোগ যাদবপুর বিদ্যাপীঠের। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'তালাশ'-এর তরফে 'লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ'-এর কথা মাথায় রেখে একটি বিশেষ কর্মশালার প্রস্তাব দেওয়া হয় শহরের এই সরকারি স্কুলটিকে। তা গ্রহণ করে যাদবপুর বিদ্যাপীঠ কর্তৃপক্ষ। ১০ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার এই কর্মসূচিতে অংশ নেয় নবম ও দশম শ্রেণির ৮০ জন ছাত্র এবং ৪০ জন ছাত্রী।
আরজি করের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তোলপাড়। কিন্তু এই ঘটনার নামোচ্চারণ না করে নারী-পুরুষের বৈষম্যের ‘বিষ’ খুদেদের মন থেকে মুছতে চেয়েছিল যাদবপুর বিদ্যাপীঠ। আর সেই লক্ষ্যেই কর্মশালাটির আয়োজন, জানিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতীম বৈদ্য।তিনি জানান, লিঙ্গসাম্যের প্রথম ধাপ হিসেবে স্কুলে ছাত্র ছাত্রীদের বসার জায়গা আলাদা করা হয়নি। রান্না মেয়েলি কাজ, পুরুষ মানুষ কাঁদলে লোকে কী বলবে এই জাতীয় মরচে পড়া ভাবনা থেকে ছাত্রছাত্রীদের বার করতে চেয়েছিলেন।
এই কর্মশালায় প্রথম থেকে পড়ুয়াদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের সহ-শিক্ষিকা রিমিতা বসু। তিনি এই সময় অনলাইন-কে বলেন, ‘বিভিন্ন ছবির দৃশ্য সামনে রেখে পড়ুয়াদের বোঝানো হয়েছে। যেমন ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবির একটি দৃশ্যে দেখা যায় সিনেমায় নিজের স্ত্রীর উপর চিৎকার করছেন অমরেশ পুরী। এই দৃশ্য সামনে রেখে পড়ুয়াদের বোঝানো হয়েছে, মেয়েদের নিজেদের বক্তব্য রাখার সুযোগ দিতে হবে। অযাচিত চিৎকার কাম্য নয়।’
যাদের জন্য এত উদ্যোগ, কী বলছে সেই পড়ুয়ারা? এই কর্মশালায় অংশ নেওয়া ছাত্র সৌরিষ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘যা-যা শিখেছি মা-বাবার সঙ্গে আলোচনা করেছি। আগামিদিনে এই শিক্ষা সঙ্গে নিয়েই চলব।’
অপর ছাত্র গৌরব সাহা বলে, ‘পোশাক থেকে পেশা, সবটাই সবাই জন্য। এখানে আলাদা করে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ নেই। শুধু নিজের মধ্যে নয়, এই বার্তা আমি আগামিদিনে সকলকে দেব।’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'তালাশ'-এর এই ‘গাহি সাম্য়ের গান’-এ ‘আলোকপ্রাপ্ত’ জেন জ়ি ছাত্রছাত্রীরা। খুদে মনে ‘লিঙ্গ সাম্য’-এর এই বীজ বপন করার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অভিভাবকরাও।