পাল্টা আখ্যান তৈরি করতে কোন্নগর হাতিয়ার শাসকের, বিক্রমের মায়ের কান্না গরিব মানুষকে শোনাতে চায় তৃণমূল
আনন্দবাজার | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত যখন ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ স্লোগানে মুখর, তখন কোন্নগরের যুবক বিক্রম ভট্টাচার্যের মৃত্যুকেই পাল্টা আখ্যান তৈরির ‘হাতিয়ার’ করতে চাইছে তৃণমূল। তবে শাসকদলের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় মানছেন, এখনও পর্যন্ত জনতার মেজাজে বড়সড় কোনও ‘বদল’ আসেনি। কোন্নগরের ঘটনার চেয়ে তাঁদের কাছে এখনও আরজি করে চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার অভিঘাত অনেক বেশি। তবে আন্দোলনের নামে জুনিয়র চিকিৎসকেদের কর্মবিরতির ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি, মৃত্যুর ঘটনাকে গ্রামাঞ্চল এবং গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছে তৃণমূল।
কোন্নগরের যুবক পথদুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন। তাঁর মা অভিযোগ করেছেন, ছেলেকে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কোনও চিকিৎসক এগিয়ে আসেননি। বিনা চিকিৎসায় ছটফট করতে করতে মারা গিয়েছেন তাঁর পুত্র। তার পরে বিক্রমের বাড়িতে গিয়েছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার হুগলির তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে গিয়ে বিক্রমের মায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন। মৃত যুবকের মায়ের কান্নার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। শাসকদলের ‘সাইবার বাহিনী’ বিভিন্ন জায়গায় লিখতে শুরু করেছে, ‘এলিট নয় বলে কি কোন্নগরের যুবকের মৃত্যুর বিচারের দাবি উঠবে না?’ সাংসদ কল্যাণ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কেন জাস্টিস ফর কোন্নগর হবে না?’’
সেই প্রশ্ন তুললেও তৃণমূলের প্রথম সারির অনেক নেতাই মেনে নিচ্ছেন, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে এবং তার এতগুলি দিক রয়েছে যে, সেখানে কোন্নগরের ঘটনা ‘স্পর্শকাতর’ হলেও ‘প্রত্যাশিত’ অভিঘাত তৈরি করতে পারছে না। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশের ভূমিকাকেও দায়ী করছেন শাসকদলের নেতারা। এক তৃণমূল নেতার বক্তব্য, ‘‘আরজি কর নিয়ে সংবাদমাধ্যমের একটা অংশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে খবর পরিবেশন করছে। তার ফলে জনগণ প্রভাবিত হচ্ছেন। কিন্তু কোন্নগর সে ভাবে মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যমে জায়গা পাচ্ছে না।’’
তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকেই চাইছেন, বিক্রমের মায়ের কান্নাকে গ্রাম-মফস্সলের গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। কারণ, সেই মানুষই মূলত সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামোর উপর নির্ভরশীল। আবার তাঁরা ভোটে তৃণমূলের লক্ষ্মীও বটে। পরিস্থিতি যে তৃণমূলের অনুকূলে নেই, তা প্রথম সারির তৃণমূল নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন। আবার বিরোধীরাও কোন্নগরের ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের প্রচারের ‘ফাঁদে’ পা না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। যেমন বিজেপি নেত্রী শর্বরী গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘কেন হুগলি থেকে ওই যুবককে আরজি করে নিয়ে আসতে হয়েছিল? শ্রীরামপুর, চুঁচুড়ায় কি ওই চিকিৎসার উপযোগী হাসপাতাল নেই?’’
সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে গত সোমবার রাজ্যের তরফে তথ্য দিয়ে বলা হয়েছিল, এক মাসে বিনা চিকিৎসায় রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে কোনও ঘটনাকেই তৃণমূল সে ভাবে পাল্টা ‘হাতিয়ার’ হিসাবে ব্যবহার করতে পারেনি। কোন্নগরের মৃত যুবকের পরিবারের পাশে গোড়া থেকেই রয়েছে শাসকদল। তৃণমূল মনে করছে, শহর বা মফস্সলের উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্তদের এই ঘটনা না নাড়া দিলেও ‘সঠিক’ ভাবে প্রচার করতে পারলে গ্রামাঞ্চলের গরিব মানুষকে বোঝানো যাবে। তবে সেই কাজ করতে সাংগঠনিক ভাবে ছাত্র-যুব-মহিলা সংগঠনগুলির যে ভূমিকা দরকার, তাতে ফাঁক রয়ে যাচ্ছে। রাজ্যসভায় তৃণমূলের এক সাংসদের কথায়, ‘‘শুধু সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে বিষয়টিকে গরিব মানুষের মধ্যে নিয়ে যাওয়া যাবে না। তার জন্য দরকার সাংগঠনিক পরিকল্পনা। সেই জায়গায় দুর্বলতা থাকছে।’’