রাজ্যপাল-মুখ্যসচিব বৈঠকের পর এ বার সচিব পদে নিয়োগের সম্ভাবনা, দূরত্ব কমছে নবান্ন-রাজভবনের?
আনন্দবাজার | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
দীর্ঘ শৈত্যের পর অবশেষে কি স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি? দূরত্ব কমতে চলেছে রাজভবন ও নবান্নের? নেপথ্যে আরজি কর-কাণ্ড? সম্প্রতি রাজ্য প্রশাসনের অন্দরমহলে চলছে এমনই চর্চা। নবান্ন সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন শূন্য থাকার পর রাজভবনের সচিব পদে এক আমলার নিযুক্তি হতে চলেছে। পাশাপাশি, নবান্নের তরফে রাজভবনের আরও কিছু প্রশাসনিক পদে আধিকারিকদের নিয়োগ করা হবে বলেও খবর। সব ঠিকঠাক থাকলে দুর্গাপুজোর আগেই রাজভবনের একাধিক শূন্যপদে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকেরা, সূত্রের খবর এমনটাই।
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে নিযুক্ত হন সিভি আনন্দ বোস। সেই সময় তাঁর সচিব হিসাবে রাজ্য সরকার নন্দিনী চক্রবর্তীকে নিয়োগ করে। কিন্তু রাজভবন ও নবান্নের বিবাদের আবহে নন্দিনীকে সচিব পদ থেকে সরানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করেন রাজ্যপাল। নন্দিনীকে বদলি করা হয় পর্যটন দফতরে। নন্দিনী বর্তমানে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব পদে কর্মরত। এ দিকে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শূন্য রয়েছে রাজ্যপালের সচিব পদ। ওই বছরের অগস্টে প্রেস সচিব শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেন রাজ্যপাল বোস। রাজভবন সূত্রে খবর, এই দু’টি ছাড়াও বেশ কয়েকটি সচিব পর্যায়ের পদ গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে শূন্য। শোনা যাচ্ছে, এ বার সেই সমস্ত পদে আধিকারিক নিয়োগ করতে চলেছে নবান্ন।
বিধানসভায় গত ৩ সেপ্টেম্বর পাশ হয়েছে অপরাজিতা বিল। পরে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় রাজভবনে। প্রয়োজনীয় ‘টেকনিক্যাল রিপোর্ট’ না থাকায় রাজ্যপাল সম্মতি দিতে পারছেন না বলে নবান্নকে জানায় রাজভবন। তার পর তড়িঘড়ি রাজভবনে যান মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। ওই সাক্ষাতের পর বিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল বোস। এখানেই ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের প্রশ্ন, যে রাজভবনে যাওয়া নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক মন্তব্য করেছিলেন, সেখানে মুখ্যসচিবের তড়িঘড়ি যাওয়া কি স্রেফ কাকতালীয়? রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের অনুমতি ছাড়া নিশ্চয়ই মুখ্যসচিব পন্থ সাংবিধানিক প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাননি। দু’পক্ষের এই তৎপরতা ইঙ্গিত করে ওই মহলের আরও প্রশ্ন, অতীতের ‘তিক্ততা’ ভুলে কি ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’-এর পথে রাজভবন ও নবান্ন?
রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দু’পক্ষই সংঘাতের আবহ থেকে সরে আসার বার্তা দিয়েছে। রাজভবন সূত্রে খবর, অপরাজিতা বিল নিয়ে রাজ্যপালের তোলা প্রশ্নের জবাব দিতে মুখ্যসচিবকে রাজভবনে যেতে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই। সে কথা জানতে পেরে কিছুটা নমনীয় হয়েছেন রাজ্যপাল। পরস্পরের অস্বস্তি না বাড়িয়ে রাজ্যে শান্তির পরিবেশ স্থাপনের চেষ্টায় ঐক্যবদ্ধ সুরকে ইতিবাচক মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। তাদের ব্যাখ্যা, এমন পরিস্থিতিতে পরস্পরের বিরুদ্ধে সংঘাতে না গিয়ে সহমতের ভিত্তিতে আরজি কর-কাণ্ডের জেরে তৈরি হওয়ার জটিল পরিস্থিতির উন্নতি চাইছে রাজভবন ও নবান্ন। তাই আপাতত ‘যুদ্ধবিরতি’র ইঙ্গিত মিলছে দুই শিবির থেকেই।