সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের দুর্গাপুজোর আয়োজন মানে আলাদা আকর্ষণ। পুজো আসার অনেক আগে থেকেই মানুষ খোঁজ রাখেন এ বার কোন থিমে হবে মণ্ডপ। সে সব নিয়ে এ বার তেমন কৌতূহল ততটা না থাকলেও অন্য জল্পনা রয়েছে। কলকাতায় তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীদের অনেক পুজোর ভিড়ে এই পুজোই একমাত্রই গেরুয়া শিবিরের। প্রধান উদ্যোক্তা ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি বিধায়ক সজল ঘোষ। সদ্যই বরাহনগর বিধানসভা উপনির্বাচনে পরাজিত সজলের পুজো এ বারেও জাঁকজমকের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু আরজি কর-কাণ্ডের জেরে যখন উৎসব ছেড়ে পুজোর ডাক উঠেছে তখন কী করবেন সজল? আগে থেকেই ঘোষণা করা ‘আশ্চর্য গোলক’ থিমে মণ্ডপ হবে তো? গত পুজোয় এখানে তখনও অযোধ্যায় উদ্বোধন না হওয়া রামমন্দিরের আদলে মণ্ডপ দেখতে বিপুল ভিড় হয়েছিল। উদ্বোধনে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এ বার কী হবে? এমন নানা প্রশ্ন উঠছে। সেই আবহে সজল বললেন, ‘‘উৎসব হবে, তবে সেটা প্রতিবাদের উৎসব।’’
এ বারের পুজো নিয়ে সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের সঙ্গে আগেই সংঘাত তৈরি হয় কলকাতা পুলিশের। প্রতি বার এই মণ্ডপের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাওয়া পুলিশ বেশ কয়েকটি শর্ত দেয়। স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যা বৃদ্ধি, সিসিটিভির সংখ্যা বৃদ্ধি, দর্শনার্থীদের প্রস্থানের জায়গা বড় করার মতো একাধিক শর্ত দেওয়া হয়েছে। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, মণ্ডপের সামনের দিকে মাঝামাঝি অংশে পুলিশের জন্য একটি বিশেষ মঞ্চ করতে হবে, যাতে সেখান থেকে নজরদারি চালানো যায়। ভিড়ের সময় কমিটির তরফে কম করে ২৫০ জন ও ভিড় না থাকলে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে। ৩৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর কথাও বলে হয়েছে। গত বছর ১৪টি সিসিটিভি ছিল। এই মণ্ডপ দর্শনের পরে একটি সরু গলি দিয়ে দর্শনার্থীদের বার হতে হয়। তাতেও খানিক আপত্তি পুলিশের। একই সঙ্গে বলা হয়েছে মণ্ডপের বাইরের অংশে কোনও স্টল দেওয়া যাবে না, পাশের মাঠে যে মেলা বসে সেখানে নাগরদোলা জাতীয় কিছু বসানো যাবে না। এখন অবশ্য বড় হয়ে উঠেছে অন্য প্রশ্ন।
প্রশ্ন উঠেছে থিম বদলে দেওয়া হবে কি না? পূর্ব ঘোষণা মত, এ বারের থিম আমেরিকার লাস ভেগাস শহরের বিখ্যাত স্ফিয়ারের অনুকরণে আলোর গোলক। বিশাল এই গোলকের গায়ে দেখা যাবে নানা রকম ছবি ও আলোর খেলা। আর ভিতরে দেখা যাবে সায়েন্স সিটির স্পেস ওডেসির মতো বহুমাত্রিক চলচ্চিত্র। সেখানে পুরাণের দুর্গা-কাহিনি ও মহিমা নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের কথাও জানানো হয়েছিল। সে সবের বদল হচ্ছে না বলেই জানিয়েছেন সজল। তিনি বলেন, ‘‘ঠিক কী কী বদল আসছে তার জন্য আর দু-একটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে উৎসব হবে প্রতিবাদের। ঢাক বাজবে কিন্তু মনে রাখতে হবে সব বাদ্যই এক রকমের হয় না। সিঁদুর খেলাও হবে। কিন্তু তাতেও থাকবে প্রতিবাদের ছাপ।’’