• শিল্পাঞ্চলে কর্মরত গানম্যানরা বেআইনি অস্ত্র কারবারে যুক্ত? পর্দা ফাঁস আসানসোল পুলিসের
    বর্তমান | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সুমন তেওয়ারি, আসানসোল : বিহারের গোপলগঞ্জে অবৈধ অস্ত্র কারখানায় বানানোর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভুয়ো লাইসেন্সে দেখিয়ে ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্ব পালন করছেন শিল্পাঞ্চলের গানম্যানরা। পুলিসি তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন স্বর্ণবন্দকি সংস্থা, শোরুমে রোমহর্ষক ডাকাতির ঘটনার পর এই তথ্য যথেষ্ট উদ্বেগের। কুলটি থানার পুলিস তদন্তে নেমে কর্মরত চারজন গানম্যান সহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। দুটি দু’নলা ও তিনটি একনলা বন্দুক পাওয়া গিয়েছে। তদন্তের প্রাথমিক স্তরেই জানা গিয়েছে, প্রচুর সংখ্যাক মানুষ এভাবে অবৈধ অস্ত্র কিনে নকল লা‌ই঩সেন্স বানিয়ে শিল্পাঞ্চলে কর্মরত রয়েছেন। এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের কোনও নথিই পুলিস ও প্রশাসনের কাছে নেই। যেভাবে ব্যাঙ্ক সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় অবৈধ অস্ত্রধারীরা কর্মরত রয়েছেন, তাতে প্রতিষ্ঠানগুলির নিরাপত্তারও প্রশ্নের মুখে। পুলিস গানম্যান নিয়োগ করা সংস্থাগুলিকে নোটিস করছে। তারা কিসের ভিত্তিতে, কি কি নথি দেখে গানম্যান নিয়োগ করে, তা খতিয়ে দেখতে চাইছে পুলিস। 

    বুধবার ডিসি (পশ্চিম) সন্দীপ কারা বলেন, অবৈধ অস্ত্র কারবারের একটি বড় চক্রের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। এরা বিভিন্ন সিকিউরিটি গার্ডকে উচ্চ বেতনের গানম্যান হওয়ার টোপ দিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও ভুয়ো লাইসেন্স তুলে দিচ্ছে। তাদের ফাঁদে পড়ে বহু মানুষ বেআইনি অস্ত্র নিয়ে কাজ করছেন। আমরা গানম্যান নিয়োগ করা সংস্থাগুলিকেও শীঘ্রই নোটিস পাঠাচ্ছি। 

    নির্বাচন বা কোনও জরুরি অবস্থায় প্রশাসনের ইস্যু করা লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক স্থানীয় থানায় জমা করতে হয় সংশ্লিষ্ট মালিককে। যাতে কোনও ভাবেই ওই অস্ত্র অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা না হয়। শুধু তাই নয়, লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুকের গুলির হিসাবও রাখে প্রশাসন। প্রতি নির্দিষ্ট সময় অন্তর পুনর্নর্বীকরণ করতে হয়। এসব ঝক্কি এড়িয়ে শিল্পাঞ্চলজুড়ে অবৈধ অস্ত্র ও নকল লাইসেন্স নিয়ে বিভিন্ন সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষীর ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে গানম্যানদের। এতেই মাথাব্যাথার কারণ হয়েছে পুলিসের। তাদের দাবি, এই গানম্যানদের সঙ্গে প্রথম থেকেই অবৈধ অস্ত্র সরবরাহকারীদের যোগ থাকছে। তাই সহজেই তারা ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো অবৈধ কাজে জড়িয়ে যেতে পারে। সেইসব কাজে বন্দুকও ব্যবহার হতে পারে। যার কোনও হদিশ পুলিস পাবে না। এই পরিস্থিতিতে পুলিস গানম্যানদের নিয়োগ করা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে নোটিস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, এই সব সংস্থাকে গানম্যান নিয়োগ করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। লাইসেন্স আসল কি না, বন্দুক কোন জায়গা থেকে কেনা হয়েছে, তা যাচাই করে নিয়োগ করলেই এই চক্র ভাঙা সম্ভব। 

    জানা গিয়েছে, এই ধরনের চক্রের প্রথম সন্ধান পেয়েছিল কোকওভেন থানার পুলিস। সেবার তাঁরা মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। পরে কুলটি থানার পুলিস আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে একজন অস্ত্র সরবরাহকারী। বাকি চারজন গানম্যান। ধৃতদের একজন আবার ব্যাঙ্কে কর্মরত। তদন্তে উঠে এসেছে, এই কারবার দেশজুড়েই চলছে। সিকিউরিটি গার্ড হিসাবে কাজ করলে ৭-৮ হাজার টাকা বেতন পাওয়া যায়। গানম্যান হলেই বেতন দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাই অনেকেই ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ করে অবৈধ গান ও লাইসেন্স কিনতে তৎপর থাকে। তাদের হাতে সেই অবৈধ অস্ত্র তুলে দিতেই গোপালগঞ্জে একাধিক অবৈধ কারখানা রয়েছে। সেখানে এধরনের বন্দুকই তৈরি হয়। পুলিসি অভিযানে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্রর পাশাপাশি ১৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)