• রুজিরুটির টানে পরিবার ছেড়ে শিলিগুড়িতে নদীয়ার মৃৎশিল্পীরা
    বর্তমান | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: স্টুডিওতেই সংসার। নাওয়া-খাওয়া। দুপুরে ও রাতে কোনওদিন আলু সেদ্ধ, ভাত। আবার কোনওদিন ডাল, ডিম, মাছ কিংবা মাংস। আর মাচায় রাত্রিযাপন। এভাবেই দু’মাস ধরে শিলিগুড়ির কুমোরটুলিতে রয়েছেন নদীয়ার মৃৎশিল্পীরা। খড় কাটা থেকে মাটি ছানা, কাঠামো থেকে প্রতিমা গড়া সবটাই করছেন। তাঁরা বলেন, সাড়ে তিন মাসের সফর। পেটের টানেই পরিবার ছেড়ে এখানে এসেছি। খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। কারণ এটাই আমাদের মরশুম। 

    শিলিগুড়ি শহরে মহানন্দা নদীর পাড় ধরে পশ্চিম দিকে কিছুটা এগলেই কুমোরটুলি। সেখানে দু’টি লেনে পর পর বেশ কয়েকটি স্টুডিও। প্রায় ৩০ ফুট লম্বা ২৫ ফুট চওড়া একটি স্টুডিওয় ঢুকতেই মিলবে বাঁশের মাচা। নীচে এঁটেল মাটির স্তূপ। পাশে চাপাকল ও রান্নার গ্যাস। বুধবার দুপুরে এখানেই একজন স্নান করছিলেন। আরএকজন মধ্যাহ্নভোজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বাকি চারজনের মধ্যে কেউ কাঠামো তৈরি করছিলেন। আবার কেউ কাঠামোয় বাঁধছিলেন খড়। 

    ওই শিল্পীদের মধ্যে প্রধান নারায়ণচন্দ্র ভট্টাচার্য। নদীয়া জেলার চাকদহে তাঁর বাড়ি। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে বাড়িতে। তিনি বলেন, বাড়ির জন্য মন কাঁদলেও কিছু করার নেই। পেটের টানেই রথের পরের দিন এখানে এসেছি। দু’মাস কাটিয়ে দিয়েছি। এর আগে এভাবেই দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে প্রতিমা তৈরি করেছি। 

    আরএক শিল্পী মাধব দাসের বাড়ি হরিণঘাটায়। তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলে। ছেলেদের একজন পড়াশোনা করছে। আরএকজন ব্যবসা করেন। তিনি বলেন, টিনের চাল হওয়ায় দিনে স্টুডিতে অসহ্য গরম। তাছাড়া কোনও সমস্যা নেই। এখানেই নাওয়া-খাওয়া। যখন যেমন হচ্ছে খাচ্ছি। কোনও দিন আলু সেদ্ধ ও ভাত, আবার কোনও দিন ভাত, ডাল, ডিম, সয়াবিন, মাছ কিংবা মাংস হচ্ছে। মাচায় রাতে থাকছি। দুপুরে খানিক বিশ্রাম। সন্ধ্যায় মুড়ি চানাচুর টিফিন। 

    এঁদের সঙ্গে আরও চারজন রয়েছেন। তাঁদের কেউ বেথুয়াডরি, কেউ মোরাগাছার বাসিন্দা। তাঁরা বলেন, এনিয়ে পরপর চার বছর এখানে এসেছি। স্থানীয় মৃৎশিল্পী দীপেশ পালের ডাকেই এখানে এসেছি। এবার ৩০টি প্রতিমা গড়ছি। এই তালিকায় থিম ও সাবেকি প্রতিমা রয়েছে। বর্তমানে থিমের চাহিদাই বেশি। দৈনিক হাজিরা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকে দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজে গতি আর বাড়ানো হবে। সেই সময় রাত আড়াইটে থেকে তিনটে পর্যন্ত কাজ চলবে। কালীপুজোর পর বাড়ি ফিরব।  - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)