• ফেরাল একাধিক হাসপাতাল,মৃত্যু দেগঙ্গার যুবকের, কর্মবিরতির বলি আরও ১
    বর্তমান | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: কলকাতার একের পর এক সরকারি হাসপাতাল ফিরিয়ে দিয়েছিল। বাধ্য হয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত যুবককে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু শেষরক্ষা হল না! মঙ্গলবার রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন দেগঙ্গার বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম (৩৮)। পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকদের লাগাতার কর্মবিরতির জেরে সরকারি হাসপাতালগুলিতে যে পরিস্থিতি চলছে, তারই শিকার হলেন সফিকুল। 

    আন্দোলন চলাকালীন রাজ্যে বিনা চিকিৎসায় ২৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানতে পেরে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ডাক্তারদের কাজে ফেরার সময় বেঁধে দিয়েছিল। সেই সময়সীমা পেরলেও আগের অবস্থানে অনড় আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। এই আবহে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর তালিকা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। স্বভাবতই এমন আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে। জনমানসে বাড়ছে ক্ষোভ। প্রশ্ন উঠছে, কোন্নগর, রিষড়া বা দেগঙ্গা—বিনা চিকিৎসায় বেঘোরে মারা যাওয়া মানুষগুলির পরিবারকে ‘জাস্টিস’ দেবে কে!  

    সফিকুলের বাড়ি দেগঙ্গার সোহাই-শ্বেতপুর পঞ্চায়েতের গাংআটি গ্রামে। পেশায় দিনমজুর সফিকুলের স্ত্রী সাইনারা বিবি অসুস্থ বলে বাপের বাড়িতে রয়েছেন। তাঁকে দেখতে গত ৩১ আগস্ট হাবড়ার সোনাকেনিয়ায় গিয়েছিলেন সফিকুল। ১ সেপ্টেম্বর ভোরে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাইকে ফিরছিলেন। হাবড়া-বেড়াচাঁপা রোড ধরে ফেরার পথে কলাপোল এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারে ডাঁই করে রাখা ইটের স্তূপে ধাক্কা মারেন তিনি। মাথায় ও শিরদাঁড়ায় জোরালো আঘাত লাগে। পরিবারের লোকজন তাঁকে প্রথমে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা শুরুও হয় তাঁর। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে সেদিন রাতেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ‘রেফার’ করা হয়। সেখানে সফিকুলকে ভর্তি করানো যায়নি। পরিবারের সদস্যদের দাবি, অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রলিও পাওয়া যায়নি। শেষে অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্রেচারেই তাঁকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের সাফ বলে দেওয়া হয়, কর্মবিরতি চলছে। চিকিৎসক নেই। রোগী ভর্তি হবে না। তখন সফিকুলকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানেও বহুক্ষণ অপেক্ষার পর চিকিৎসার সুযোগ মেলেনি। ‘বেড নেই’ বলে জানানো হয়। এসবের মধ্যে সফিকুলের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে শুরু করে। তখন তাঁকে এনআরএসে নিয়ে যাওয়া হলেও ভর্তি করানো যায়নি। কারণ সেই কর্মবিরতি! অবশেষে ২ সেপ্টেম্বর ভোরে সফিকুলকে বারাসতের ময়না এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪ সেপ্টেম্বর সফিকুলের দেহে অস্ত্রোপচার হয়। তারপর ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে। মঙ্গলবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃতের জামাইবাবু জাহাঙ্গীর গাজি বলেন, ‘আমরা কলকাতার একের পর এক হাসপাতালে ঘুরেছি। কেউই ভর্তি নিতে রাজি হয়নি। রোগীর শারীরিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে আমরা অনেক কাকুতিমিনতি করেছিলাম। আর জি করের ঘটনায় আমরাও বিচার চাই। কিন্তু এই আন্দোলনে মরছে তো গরিব মানুষ। এদের জাস্টিস কারা দেবে?’
  • Link to this news (বর্তমান)