এই সময়: আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের এক ডিসির সঙ্গে কথা বলল সিবিআই। বুধবার রাতে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার(নর্থ) অভিষেক গুপ্তাকে ডেকে পাঠানো হয়। ডিসিডিডি (স্পেশাল) বিদিত রাজ ভুনদেশকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সিবিআইয়ের অফিসারদের মুখোমুখি হন।কেন্দ্রীয় সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কিছু জানানো না হলেও মনে করা হচ্ছে, নির্যাতিতার বাবা কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা অফার করা নিয়ে যে অভিযোগ করেছিলেন তার সত্যতা যাচাই করতেই ডিসিকে উপস্থিত হতে বলা হয়। এদিকে, হাসপাতালের দুর্নীতির মামলায় ধৃত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের স্ত্রী সঙ্গীতা ঘোষকে চলতি সপ্তাহে তলব করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
সূত্রের খবর, দুর্নীতির ঘটনায় কে কে লাভবান হয়েছেন, সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে কারা যুক্ত ছিলেন সে সব বিষয়ে জানতে তাঁকে ডাকা হয়েছে। এর আগে দু’বার তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা। তবে সে সময়ে তিনি সব তথ্য জানাননি বলে সিবিআইয়ের দাবি।
পড়ুয়াদের জিজ্ঞাসাবাদ
তরুণী চিকিৎসকের দেহ ঠিক কীভাবে পড়ে ছিল, দেহ উদ্ধারের পরে কী ঘটেছিল, এ সব প্রশ্নের উত্তর পেতে বুধবার দীর্ঘ সময় ধরে ৩ জন ডাক্তারি পড়ুয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। ওই তিনজন হলেন, আশিস পাণ্ডে, নির্জন বাগচি এবং সারিফ হাসান। মঙ্গলবার সারিফ সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, আরজি করে যে ঘটনা ঘটেছে তা একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়।
পাশাপাশি, ঘটনার রাতে বয়েজ হস্টেলে পার্টি করা হচ্ছিল বলে জানতে পেরে ওই পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। সেমিনার রুম অর্থাৎ যেখান থেকে তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়েছিল তার আশপাশে সিসিটিভির বিষয়েও পড়ুয়াদের কাছ থেকে তথ্য রেকর্ড করে সিবিআই। এ দিনই আবার প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে গিয়ে সঞ্জয়ের সঙ্গেও কথা বলেন তদন্তকারীরা। ডাক্তারি পড়ুয়াদের বয়ানের ভিত্তিতে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে জেরা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
নজরে সন্দীপের সম্পত্তি
আরজি করের দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার তদন্তে এখনও পর্যন্ত সন্দীপ ঘোষের সাতটি সম্পত্তির হদিশ পেয়েছেন ইডির তদন্তকারীরা। এরমধ্যে রয়েছে মুর্শিদাবাদে এবং কলকাতা মিলিয়ে ৪টি ফ্ল্যাট। এর বাইরেও সন্দীপ এবং তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতার নামে ২টি বাড়ি এবং একটি ফার্ম হাউসেরও খোঁজ মিলেছে। শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারকে কোনওরকম ট্যাক্স না দিয়ে দুটি স্থাবর সম্পত্তি সন্দীপ কিনেছিলেন বলে ইডি সূত্রে খবর।
তদন্তকারীদের দাবি, দুর্নীতির মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে যে টাকা আয় করেছিলেন সন্দীপ, তা দিয়ে এই সম্পত্তি কেনা হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী, সন্দীপ প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন না। কিন্তু, সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বারাসত এবং বারুইপুরে তিনি রোগী দেখতেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ওই দুই জায়গা থেকে সন্দীপ কত টাকা আয় করেছেন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, আত্মীয়দের বাড়ি থেকে সন্দীপের যে দুটি ল্যাপটপ উদ্ধার হয়েছে সেখানে প্রচুর পুরুষের নগ্ন ছবি মিলেছে। সেগুলি কেন ল্যাপটপে রেখেছিলেন তিনি, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
স্ক্যানারে ব্যবসায়ী
সল্টলেকের বাসিন্দা স্বপন সাহার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ মিলেছে বলে বুধবার দাবি করেছে ইডি। ওই ব্যবসায়ী আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছে। ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৯ কিলো ২০০ গ্রাম সোনা এবং ১৬৫ ক্যারেট হিরে উদ্ধার করা হয়েছে। মিলেছে নগদ ১০ লক্ষ টাকা।
পাশাপাশি তাঁর অ্যাকাউন্টেও ১০ কোটি টাকা রয়েছে বলে দাবি ইডির। কী করে ওই ব্যবসায়ী বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেন সে বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের দাবি, সন্দীপ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২৫টি ডিজিটাল নথি মিলেছে। যা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ফরেন্সিকে। ওই রিপোর্ট থেকে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ আরও কয়েকজনের নাম মিলবে বলে দাবি তদন্তকারীদের।