সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: দুর্গাপুরে পুলিশের ডাকাতি-কাণ্ডে এবার পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থেকে গ্রেপ্তার এক কোটিপতি প্রতারক। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই ঢুকেছিল পুলিশের লুঠের ৫০ লক্ষ টাকা। ‘অতিরিক্ত’ টাকার লোভই কাল হয়েছিল দিল্লির ব্যবসায়ী মুকেশ চাওলার। এই মুকেশের কাছ থেকেই দুর্গাপুরে কয়েকদিন আগে এক কোটি টাকা লুঠ হয়েছিল। ডাকাতির তদন্তে নেমে দুর্গাপুর থানার এক এএসআই, সিআইডির এক কনস্টেবল, এক বরখাস্ত পুলিশ অফিসার-সহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সেই টাকা উদ্ধারে রবিবার রাতে সালানপুরে দুই ব্যবসায়ীর বাড়িতে তল্লাশি চলে। ব্যবসায়ী অজয় রামের বাড়ি থেকে ৭ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে। তাঁর স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। মুকেশকে প্রতারকরা ‘অফার’ করেছিল ৫০ লক্ষ টাকা দিলে এক মাসের মধ্যে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা দেওয়া হবে। একমাস আগে ব্যবসায়ী দিয়েছিলেন ৫০ লক্ষ টাকা। এবার সুদে-আসলে সব টাকা নিতেই তিনি আসেন আসানসোলে।
ডাকাতিরস দিনে ব্যবসায়ীর কাছে ছিল প্রতারকদের দেওয়া ৫০ লক্ষ, অতিরিক্ত ১৫ লক্ষ ও এক লক্ষ অর্থাৎ মোট ৬৬ লক্ষ টাকা। এছাড়া ছিল নিজের ৩৫ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ মোট ১ কোটি ১ লক্ষ টাকা। ওই বিপুল টাকা কলকাতা যাওয়ার সময়েই দুর্গাপুরে জাতীয় সড়কের উপর ওই ‘চিটিং গ্যাং’ ছিনতাই করে। লুঠের টাকায় কমিশনের লোভে এই ‘চিটিং গ্যাং’-এ পুলিশ কর্মীরাও যোগ দিয়েছিলেন। ধৃতদের জেরা করেই হদিস মেলে ডাকাতির অন্যতম পান্ডা পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার বাসিন্দা মধুসূদন বাগের।
কে এই মধুসূদন বাগ? সে পাঁশকুড়ার রঘুনাথবাড়ির বাসিন্দা। বিভিন্ন প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত সে। রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন সে। তার নামে নদিয়ার কল্যাণী থানায় জাল ট্রেড লাইসেন্সের চক্র চালানানোর অভিযোগ রয়েছে। পাঁশকুড়া থানাতেও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে ধৃত মধুসূদনের নামে। মধুসুদনের অ্যাকাউন্টেই ডাকাতির ৫০ লক্ষ টাকা ঢোকে। যদিও ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তা তুলেও নেওয়া হয়।
ধৃতের প্রায় ১৫টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছে পুলিশ। একটি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। সেই অ্যাকাউন্টে ১০ লক্ষ টাকা ছিল। মধুসূদনের ১৩টি সিম কার্ডের হদিশ পেয়েছে পুলিশ। নামে, বেনামে ১৫ মালিক সংস্থার মালিক কোটিপতি প্রতারক মধুসূদন বাগ।
কীভাবে গ্রেপ্তার হল সে? মধুসূদনকে পাকড়াও করতে বাঁকুড়া, কল্যাণী, পাঁশকুড়ায় ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল পুলিশ। পালিয়ে বেড়াচ্ছিল সে। মঙ্গলবার রাতে তমলুকের ভাড়াবাড়িতে ঢুকতেই তাকে ধরে ফেলে দুর্গাপুর থানার পুলিশ। বুধবার ধৃতকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশ সূত্রের খবর, সালানপুরের দুই ব্যবসায়ীর মাধ্যমে মধুসূদনের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতারণা চক্রের। দুই ব্যবসায়ীর সঙ্গে মধুসূদন এর আগেও প্রতারণা চালিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। পুলিশের দাবি, এই চক্রে ঝাড়খণ্ড রাজ্যেরও যোগ রয়েছে। সেখানেও তল্লাশি চলছে। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা বলেন, “এই প্রতারণা চক্রে কমিশনের লোভে আরও অনেকে যুক্ত রয়েছে। ভিন রাজ্যেরেও যুক্ত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আমাদের তল্লাশি চলছে।”