• তরুণীর ক্যারাটের প্যাঁচে পালাল দুষ্কৃতীরা, প্রশ্নে পুলিশের ভূমিকা
    এই সময় | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • মানস রায়, মালদা

    আরজি কর কাণ্ডের জেরে বার বার উঠে আসছে মেয়েদের শরীর চর্চা, আত্মরক্ষার পাঠ-এর প্রয়োজনীয়তার কথা। সেটাই হাতেকলমে করে চার দুষ্কৃতীকে ঘায়েল করলেন মালদার এক তরুণী। দুষ্কৃতীরা তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিলেও মার্শাল আর্ট জানা তরুণীর একরোখা মনোভাব দেখে ‘অত্যাচার’ করার সাহস পায়নি। উল্টে পাল্টা মার খেয়ে পালিয়েছে তারা। ঘটনার দু’দিন পরে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।নিজেকে বাঁচানোর পরেও ওই তরুণী অপ্রত্যাশিত ওই ঘটনায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের তৎপরতা নিয়ে। ওই শিশু উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে জেলা আদালত, ট্রেজারি, জেলা প্রশাসনিক ভবন-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। ফলে সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারি রয়েছে। পুলিশ সেখান থেকে কী অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে পেরেছে? এফআইআর কি হয়েছে? হলে কী কী ধারায় মামলা হয়েছে? জেলা পুলিশ এই ব্যাপারে মন্তব্য এড়িয়েছে।

    মালদা আদালতের আইনজীবী বিপুল দত্ত জানিয়েছেন, ‘অভিযোগে যেটুকু লেখা হয়েছে তাতেই এফআইআর দায়ের হওয়ার কথা। একাধিক ধারায় মামলা হতে পারে। তার মধ্যে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১১৮ নম্বর ধারাটা (গুরুতর আঘাত করা, যা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

    মালদায় নারীদের বিরুদ্ধে হিংসা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘রেইজ ইওর ভয়েস’-এর সদস্য চিরশ্রী দাশগুপ্ত বলেন, ‘যে ভাবে মেয়েটি ক্যারাটের প্যাঁচে পাল্টা মেরেছে, সব মেয়েকেই এটা শিখতে হবে। নইলে যতই জাস্টিস চাই বলে চিৎকার করি না কেন, সব অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যাবে।’

    গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতের ঘটনা। স্থান ইংরেজবাজার পুরসভার শুভঙ্কর শিশু উদ্যান সংলগ্ন রাস্তা। আক্রান্ত তরুণী লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, রাত ন’টা নাগাদ তিনি ও তাঁর দিদি পার্কের সামনে গিয়েছিলেন। ওখানে চার জন যুবক হঠাৎ তাঁদের দূর থেকে নানা রকম কটূক্তি করতে শুরু করে। এবং পিছু নেয়। তরুণী রুখে দাঁড়ালে ভোজালি ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। হঠাৎ পাশে থাকা লস্যির দোকান থেকে কাচের বোতল নিয়ে ওদের একজন পিছন থেকে তরুণীর মাথায় আঘাত করে। মাথা ফেটে যায়।

    ঘটনাস্থলে থাকা কয়েক জন তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে দুষ্কৃতীরা সেই সুযোগে পালিয়ে যায়। রবিবার ওই সময়ে শিশু উদ্যানে প্রচুর মানুষ ছিলেন। তার মধ্যে এমন ঘটনা কী ভাবে সম্ভব? তরুণী বলেন, ‘ঘটনার সময়ে আশপাশে অন্ততঃ শ’দুয়েক মানুষ ছিলেন। কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে কেউ এগিয়ে আসেনি।’

    আক্রান্ত তরুণীর এক আত্মীয় দাবি করেছেন, ‘থানায় অভিযোগে যা লেখা হয়েছে মূল ঘটনা তার চেয়েও ভয়ঙ্কর। ছেলেগুলো তরুণীর জামা ধরে টানাটানি করেছিল। পাল্টা প্রতিরোধ দেখে প্রথমে পালিয়ে যায়। পরে দলবেঁধে এসে হামলা চালায়।’ শিশু উদ্যানটি ইংরেজবাজার পুরসভার। পুরপ্রধান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘আক্রান্ত মহিলা ওর দিদিকে নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। আমি সবটা শুনে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছিলাম।’
  • Link to this news (এই সময়)