শুরুটা কুণাল ঘোষ করেছিলেন বুধবার রাতে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ‘সংগঠিত’ ভাবে ময়দানে নামল তৃণমূল। কোকেন পাচারে অভিযুক্ত হয়ে জেলে যাওয়া পামেলা গোস্বামী কেন স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে গিয়েছেন, সেই প্রশ্ন তুলে পদ্মশিবিরের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছে তৃণমূল। শাসকদলের তরফে জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, তাঁরা যেন এই ঘটনা ‘প্রতিরোধ’ করেন। তৃণমূলের এ-ও অভিযোগ যে, বিজেপি যে এই আন্দোলনের ‘রাজনীতিকরণ’ চাইছে, পামেলার উপস্থিতি সেটাই প্রমাণ করে দিচ্ছে।
বিজেপি পাল্টা দাবি করেছে, পামেলা তাঁদের দলের কোনও পদে নেই। রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র তরুণজ্যোতি তিওয়ারি বলেন, ‘‘পামেলা আমাদের দলের কোনও পদে নেই। দ্বিতীয়ত, পামেলার বিরুদ্ধে কিছুই আদালতে প্রমাণিত হয়নি। আদালত ওঁকে মুক্তি দিয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট যে, ওঁকে ফাঁসানো হয়েছিল।’’ ডাক্তারদের আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ করার অভিযোগ নিয়ে তরুণজ্যোতি বলেছেন, ‘‘ওই আন্দোলন ডাক্তারদেরই আন্দোলন। তা হাইজ্যাক করার কোনও প্রশ্নই নেই। তাঁদের আন্দোলনের পাশে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ রয়েছেন। তৃণমূলে যদি কোনও মানুষ থেকে থাকেন, যাঁর মধ্যে মনুষ্যত্ব রয়েছে, তিনিও তো ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে পারেন!’’
কুণাল তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে বুধবার রাতে পামেলার ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, “এটা কোথাকার ছবি? ইনি কে? সোশ্যাল মিডিয়ায় যা ঘুরছে, তা কি ঠিক? ইনি যদি তিনি হন, তা হলে ইনি এখানে কেন? ইনি এলেন? না ডাকা হল? ডাকা হলে কেন হল? যদি কেউ স্পষ্ট করে ঘটনাস্থল এবং চরিত্রগুলি জানাতে পারেন, পোস্ট করবেন প্লিজ। আমি কনফিউজড।” পাল্টা পামেলা কুণালের কৌতূহল নিরসন করে রাতেই বলেছিলেন, “আমি জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে ছিলাম।” শাসকদলের নেতার পোস্ট সম্পর্কে পামেলার জবাব ছিল, “আমাকে রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও আমাকে অব্যাহতি দিয়েছে। আসলে প্রতিহিংসার জন্যই এ সব কথা বলা হচ্ছে।” প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত কুণালকে উদ্দেশ করে একাধি পোস্ট করতে থাকেন পামেলা। আদালতের নথিও পোস্ট করে দেন পামেলা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কুণাল তো বটেই, সামগ্রিক ভাবে গোটা তৃণমূলই পামেলার উপস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে। পামেলার সঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, একদা রাজ্যে বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্যের ছবি কোলাজ করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তৃণমূল লেখে, ‘‘মাদক মামলায় অভিযুক্ত বিজেপি নেত্রীকে দেখা গেল ‘অরাজনৈতিক’ প্রতিবাদে।’’ পাশাপাশি, জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে তৃণমূল লিখেছে, ‘‘আপনারা এই রাজনৈতিক উস্কানি প্রতিহত করুন এবং আপনাদের যে দায়িত্ব রয়েছে, মানুষের জীবনরক্ষার সেই দায়িত্ব পালন করুন।’’ রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজাও পামেলার বিরুদ্ধে কোকেন পাচারের অভিযোগ তুলে বলেন, ‘‘ওঁর উপস্থিতি প্রমাণ করে দিচ্ছে, বিজেপি সুবিধাবাদী রাজনীতি করতে চাইছে।’’ পাল্টা পামেলা বলেন, ‘‘আমি তো শশী পাঁজাকে শিক্ষিত মহিলা বলে জানতাম। কিন্তু উনি আমার মামলার গোটা বিষয়টি না জেনেই এই সব মন্তব্য করেছেন। ওঁর জানা উচিত, রাজ্য পুলিশই আমায় ক্লিনচিট দিয়েছে। আর আমি একজন মহিলা। এই ভাবে মিথ্যা কথা বলে সর্বসমক্ষে একজন মহিলার ভাবমূর্তি নষ্ট করা যায় না।’’ পামেলার আরও দাবি, ২০২১ সালের ভোটে তিনি সিঙ্গুর থেকে প্রার্থী হতেন। নির্বাচনে যাতে তিনি না দাঁড়াতে পারেন, তাই তাঁকে মাদক মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।