আন্দোলন যতই তীব্র হোক, তাঁকে অপসারণের দাবি যতই জোরালো হয়ে উঠুক, কলকাতার নগরপালকে এখনই দায়িত্ব থেকে সরাতে চান না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্তত দুর্গাপুজোর আগে তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের সার্বিক ভূমিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। যার জেরে নগরপাল বিনীত গোয়েলকে সরানোর দাবি উঠেছে।
যদিও দিনকয়েক আগেই মুখ্যমন্ত্রী জানান, নগরপালকে এখনই সরাবেন না। তিনি বলেন, ‘‘সামনে পুজো। যিনি থাকবেন, তাঁকে তো আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি জানতে হবে। কিছু দিন ধৈর্য ধরলে কী হয়?’’ মুখ্যমন্ত্রী এ কথা বললেও লালবাজারের ইতিহাস কিন্তু অন্য কথাই বলছে। ১৭ বছর আগে রিজওয়ানুর রহমানের রহস্য-মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে উত্তাল হয়েছিল কলকাতা শহর তথা রাজ্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন ছিলেন বিরোধী দলনেত্রী। সে সময়ে নগরপাল প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন তিনি। যার জেরে ষষ্ঠীর দিন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন নগরপাল-সহ পাঁচ জন পুলিশকর্তাকে। যার মধ্যে ছিলেন ডিসি (সদর) এবং ডিসি ডিডি (গোয়েন্দা-প্রধান)-ও।
সেই সময়ে লালবাজারে কর্মরত এক পুলিশ আধিকারিক জানান, নতুন নগরপাল হিসাবে গৌতমমোহন চক্রবর্তী ষষ্ঠীর দিন দায়িত্ব নিলেও সে বারের পুজো ঠিক মতোই উতরে গিয়েছিল। তাঁর মতে, কলকাতা পুলিশ নগরপালের উপরে নির্ভরশীল হলেও তারা চলে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। ফলে, এক জন বা দু’জন সরে গেলেও গোটা ব্যবস্থা বিপাকে পড়ে না। তিনি জানান, পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় অনেক আগে থেকে। সেই মতো দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া থাকে বিভিন্ন স্তরের পুলিশ আধিকারিকদের। সেই অনুযায়ী রাস্তায় নেমে তাঁরা ডিউটি করেন। শীর্ষ কর্তারা তাঁদের উপরে নজর রাখেন।
লালবাজারের অফিসারেরা জানাচ্ছেন, শহর জুড়ে আন্দোলন চলছে মানুষের। বাহিনীর নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে নগরপালকে। তাই মুখ্যমন্ত্রী মনে করছেন, নগরপাল সরে গেলে পরিস্থিতি সামলানোর বিষয়টি যেমন ধাক্কা খাবে, তেমনই পুজোর আগে বাহিনীর মনোবল ভেঙে যেতে পারে। যার প্রভাব পড়তে পারে পুজোর সময়ে পুলিশের কাজে।