• শান্তিপুর ফুলিয়ার হ্যান্ডলুম শিল্পীদের বাঁচাতে সরাসরি শাড়ি বিক্রির উদ্যোগ
    বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: মহাজনী প্রথার জাঁতাকলে শান্তিপুর-ফুলিয়ার হ্যান্ডলুম সঙ্কটের মুখে পড়েছে। পুজোর মুখে হ্যান্ডলুম শিল্পীদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং শান্তিপুরের কিছু উদ্যোগী মানুষ। এবার সরাসরি তাঁতশিল্পীদের জন্য শান্তিপুর হাটের ঘোষ মার্কেটের নির্দিষ্ট জায়গা বিনামূল্যে দেওয়া হবে। এই উদ্যোগে খুশি হ্যান্ডলুম শিল্পীরা।

    তাঁতশিল্পীরা এখন বিপন্ন। সেইসঙ্গে বিপন্ন শান্তিপুর-ফুলিয়ার আত্মপরিচয়। অর্থাভাবে জর্জরিত হ্যান্ডলুম শিল্পীরা ক্রমশ এই কাজ থেকে সরে যাচ্ছেন। আগ্রহী নয় আগামী প্রজন্মও। এই দূরবস্থার অন্যতম কারণই মহাজনী ব্যবস্থা। কারণ হ্যান্ডলুম শিল্পীদের অর্থাভাবের সুযোগ নিয়ে সুতো সহ কাঁচামাল কিনে দেন মহাজনরাই। তারপর নামমাত্র মজুরিতে সেই শাড়ি কিনে তা বিক্রি করেন চড়া দামে। ফলে শিল্পীরা তিমিরেই থেকে যান। আবার অনেক হ্যান্ডলুম কারিগর ধারদেনা করে শাড়ি বুনলেও তা বিক্রির জন্যেও নির্ভর করতে হয় সেই মহাজনদের উপর। একই পথে কারিগরদের অল্প লাভের মুখ দেখিয়ে শাড়ি কিনে নেন মহাজন। তাই কারিগরদের একটা বড় অংশ হাল ছেড়েছেন। পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে তাঁরা রুটিরুজির খোঁজে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন বা শহর কলকাতায় যাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে একদিন শান্তিপুর অথবা ফুলিয়া আত্মপরিচয় হারিয়ে ফেলবে বলে অনেকের দাবি। বিপন্ন শিল্প বাঁচাতে এক ছাতার তলায় এসেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং শান্তিপুরের কয়েকজন উদ্যোগী মানুষ। প্রতি বৃহস্পতি এবং রবিবার সূত্রাগড়ে শান্তিপুর তাঁতের হাটে হ্যান্ডলুম শিল্পীদের নিজের তৈরি শাড়ি বিক্রির সুযোগ করে দিচ্ছেন তাঁরা। পুজোর আগে এই উদ্যোগ নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে শিল্পীদের। কারণ, প্রতি সপ্তাহে এই হাটে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে তো বটেই, রাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে ক্রেতারা আসেন। এমনকী হ্যান্ডলুমের টানে এখানে আসেন দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ব্যবসায়ীরাও। তাই সরাসরি আর্থিকভাবে দুর্বল তাঁতশিল্পীরা বিনা খরচে এই হাটে বসার সুযোগ পেলে তাঁদের মহাজনদের উপর নির্ভরশীলতা কমবে। লাভের মুখ দেখবেন তাঁতশিল্পীরা।  বৃহস্পতিবার শান্তিপুরের গবারচর থেকে এমনই প্রায় ১৫জন হ্যান্ডলুম কারিগর এসেছিলেন। আগামী দিনে ১০০জনের কাছাকাছি চলে যাবে। তাঁতশিল্পী গোপা বিশ্বাস বলেন, একটা শাড়ি তৈরি করতে যদি হাজার টাকা খরচ হয় মহাজন সেটা মাত্র ১০০টাকা বেশি দিয়ে কিনে নিয়ে চলে যায়। এখানে বিক্রির সুযোগ পেলে পরিবার নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারব। আর এক কারিগর অপর্ণা বিশ্বাস বলেন, স্বামী অনেকদিন আগেই হাল ছেড়েছেন। পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কেরলে কাজ করে। আমি একাই যতটা পারি শাড়ি তৈরি করি। কিন্তু মহাজন ঠিকমতো টাকা দিতে চান না। এখান থেকে যদি বিক্রি করতে পারি তাহলে আমাদের এলাকার মানুষের সুবিধা হবে। উদ্যোক্তা বিভাস ঘোষ বলেন, এই সমস্ত তাঁতশিল্পী এতটাই গরিব যে হাটে জায়গা কিনে দোকান তৈরির ক্ষমতা নেই। তাই আমরা বিনা পয়সায় সেই জায়গা করে দিয়েছি। যাতে তাঁরা সরাসরি নিজেদের তৈরি করা শাড়ি খোলা বাজারে বিক্রি করতে পারেন। শান্তিপুরের গরিব হ্যান্ডলুম কারিগরদের বাঁচানোর এটা শেষ চেষ্টাই বলা যেতে পারে। সরাসরি এখানে বিক্রি করতে পারলে কারিগরদের পুঁজি বাড়বে। আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে মহাজনদের উপর নির্ভরশীলতা কমলেই তাঁরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। • নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)