• যৌন নির্যাতনের কেস তুলতে হুমকি নাবালিকার উপর অ্যাসিড হামলা
    বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: পুরুলিয়ায় কিশোরীর উপর অ্যাসিড হামলার ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরুলিয়া শহর সংলগ্ন টামনা থানার ডুলমি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। কিশোরী বাড়ির দোতলার ব্যালকনিতে ছিল। সেই সময় দু’জন মুখে কাপড় বাঁধা অবস্থায় এসে কিশোরীকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড বাল্ব ছোড়ে বলে অভিযোগ। দগ্ধ অবস্থায় কিশোরীকে উদ্ধার করে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়েই হাসপাতালে গিয়ে কিশোরী ও তার মায়ের সঙ্গে দেখা করেন জেলার পুলিস সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিস সুপার বলেন, ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যেই সুনীল দরিপা ও অনির্বাণ সরকার নামের দু’জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। দোষীদের রেয়াত করা হবে না। 

    কিশোরীর পরিবার ও পুলিস সূত্রের খবর, ১৭ বছরের ওই কিশোরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল শহরেরই মিষ্টিমহল এলাকার যুবক সৌম্যজিৎ চন্দ্রের। তবে, যুবকের বহু কুকীর্তি জেনে ফেলায় সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চায় কিশোরী। তা মেনে নিতে না পেরে গত ৩০জুলাই নাবালিকাদের বাড়ির পাঁচিল টপকে প্রবেশ করে যুবক। তাকে কিশোরীর বিধবা মা দেখতে পেয়ে যান। তখন তাঁকে মারধর করে একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় ওই যুবক। তারপর সে কিশোরীকে যৌন নিগ্রহ করে বলে অভিযোগ। ওইদিনই টামনা থানায় পকসো মামলায় এফআইআর দায়ের করে কিশোরীর পরিবার। গ্রেপ্তার হয় যুবক। অভিযোগ, তারপর থেকেই কিশোরীর বাড়িতে লোক পাঠিয়ে হুমকি দিতে থাকে ধৃত যুবকের বাবা প্রশান্ত চন্দ্র। বর্তমানে সেও জেলে রয়েছে। 

    পুলিস সূত্রের খবর, ঘটনার পর থেকেই সুনীল ওই কিশোরীর বাড়িতে এসে হুমকি দিতে থাকে। কেস তুলে না নিলে পুরুলিয়ায় বাস করতে দেবে না বলে হুমকি দেয়। এনিয়ে টামনা থানায় অভিযোগ দায়ের করে কিশোরী নিজে। যদিও থানার তরফে প্রথমে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এরপর ওই ব্যক্তি আরও বেপরোয়া হয়ে নাবালিকার দিদার বাড়িতে গিয়েও হুমকি দেয়। ১৬ সেপ্টেম্বর পুরুলিয়া টাউন থানায় এফআইআর দায়ের হয়। যদিও তারপরেও অভিযুক্ত হুমকি চমকানি কমেনি। পরে জেলার পুলিস সুপারকে বিষয়টি জানায় নির্যাতিতার পরিবার। তারপরেই গ্রেপ্তার হয় সুনীল। যদিও গত ৬ সেপ্টেম্বর কোর্ট থেকে সে জামিনও পায়। তারপরই অ্যাসিড হামলা বলে পুলিসের অনুমান। পুলিস অভিযুক্ত সুনীলকে ফের আটক করেছে। তার সঙ্গে অনির্বাণ সরকার নামে একজনকে আটক করেছে। অভিযুক্ত সাঁতুড়ি বিডিও অফিসের কর্মী। কেস মিটিয়ে নেওয়ার জন্য অ্যাসিড হামলার আগের দিন অর্থাৎ বুধবারও অভিযুক্ত অনির্বাণ কিশোরীর পরিবারকে টাকার প্রলোভন দেয় বলে অভিযোগ।

    নাবালিকার মায়ের অভিযোগ, অভিযুক্ত যুবকের বাবা প্রশান্ত ও অনির্বাণ তাঁদের কেস তুলে নেওয়ার জন্য বারবার চাপ দিতে থাকে। দু’লক্ষ টাকা অফারও করা হয়। এনিয়ে জেলার পুলিস সুপারকে ফের বিষয়টি জানালে তিনি তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেন। প্রশান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।  তবে ঘটনায় টামনা থানার পুলিসের বিরুদ্ধেও নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছে কিশোরী ও তার পরিবার। তাঁদের ক্ষোভ, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। টামনা থামার পুলিস প্রথম থেকেই অসহযোগিতা করে আসছে। যদিও অপরাধীদের বিরুদ্ধে আগে থাকতেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এদিন অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটত না।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)