• আউটডোরে দীর্ঘ লাইন রোগীদের দুর্ভোগ চরমে
    বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: রাতে ট্রেন ধরে বর্ধমানে আসেন রামপুরহাটের সুফিয়ান শেখ। তাঁর কিডনিতে সমস্যা রয়েছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভালো চিকিৎসার আশায় তিনি ভোর ৫টা থেকে আউটডোরে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। বেলা দেড়টার সময়ও তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তখনও তাঁর সামনে প্রায় ৫০জন রোগী। কখন ডাক্তার দেখানোর সুযোগ পাবেন তা তাঁর জানা নেই।

    মন্তেশ্বরের আলিয়া বিবিও সকাল থেকে আউটডোরে দাঁড়িয়েছিলেন। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য খাওয়াই হয়নি। অসুস্থ হয়ে তিনি মাটিতে বসে পড়েন। মেমারি-২ ব্লক থেকে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন ৬৫বছরের বৃদ্ধা সুচিত্রা দাস। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে না পারায় বসে পড়ছিলেন। ভ্যাপসা গরম আর ঠেলাঠেলিতে তাঁর সামনে দাঁড়ানো অন্যান্য রোগীদের অবস্থাও খারাপ। তাঁরা সকলেই চাইছেন, জুনিয়র ডাক্তাররা ডিউটিতে ফিরুন। তাঁরা কাজে যোগ দিলে এই হয়রানি হতো না। জুনিয়র ডাক্তারদের অবশ্য দাবি, তাঁরা আন্দোলনে যোগ দিলেও পরিষেবা দিচ্ছেন। মেডিক্যাল কলেজে ‘অভয়া ক্লিনিক’ চালু রয়েছে। সেখানে যে কেউ গিয়ে চিকিৎসা করতে পারবেন। নামী সংস্থার ওষুধও তাঁদের বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। 

    রোগীদের অনেকেই অভয়া ক্লিনিক সম্পর্কে অবহিত নন। আধিকারিকদের অনেকেই বলছেন, আউটডোরের পরিষেবা অভয়া ক্লিনিকে দেওয়া সম্ভব নয়। আউটডোরে প্রতিদিনই কয়েক হাজার রোগী ভিড় করেন। বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, হুগলির মতো বিভিন্ন জেলার রোগীরা আসেন। এছাড়া দুই বর্ধমানের রোগীরা তো আছেনই। আউটডোরে চিকিৎসা করতে আসা মন্তেশ্বরের রসিদ খান বলেন, জুনিয়র ডাক্তাররা পালা করে আউটডোরে বসতে পারেন। সেটা হলে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা দুঃস্থ রোগীদের এতো সমস্যা হতো না। অনেকে ধৈর্য হারিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপর ভরসা রয়েছে বলেই এখানে রোগীরা আসেন।

    হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে জুনিয়র ডাক্তারদের বড় ভূমিকা থাকে। তাঁরা রাউন্ড দেওয়ায় অনেক রোগীই পরিষেবা পান। 

    হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আসা আউশগ্রামের সূর্য হালদার বলেন, আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার প্রতিবাদ সারা রাজ্যের মানুষ জানিয়েছেন। আমরাও প্রতিবাদে শামিল হয়েছি। তাঁর প্রতি যে অন্যায় হয়েছে তা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ওই চিকিৎসকের মায়ের কোল খালি হয়েছে। 

    জুনিয়র ডাক্তাররা দায়িত্ব পালন না করলে আরও অনেক মায়ের কোল খালি হয়ে যাবে। তাঁদের আন্দোলনে সমর্থন রয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। আন্দোলনরত চিকিৎসক গৌরাঙ্গ প্রামাণিক বলেন, আমরা জরুরি পরিষেবা দিচ্ছি। মানুষের কথা ভাবি বলেই অভয়া ক্লিনিক চালু হয়েছে। 

    সেখানে যে কেউ এসে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে পারেন। এক আধিকারিক বলেন, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সমস্ত দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তাঁদের কলেজ এবং হাসপাতালে ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এরপর আশা করা যায় তাঁরা কাজে যোগ দেবেন। 

     বর্ধমান মেডিক্যালের আউটডোরের সামনে রোগীদের ভিড়। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)