• কামানের বদলে আজ শূন্যে গুলি চালিয়ে শুরু হয় মানকরে বিশ্বাস বাড়ির সন্ধিপুজো
    বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, মানকর: নবাব আলিবর্দী খাঁ তখন বাংলার সিংহাসনে। মারাঠা বর্গীরা বাংলাকে আক্রমণ করছে প্রায়ই। আক্রমণ প্রতিহত করতে আলিবর্দী খাঁ ব্যস্ত রয়েছেন। এরকমই এক গভীর রাতে তিনি দেখলেন, তাঁর খাজাঞ্চি কিছু কাগজ নিয়ে এসেছেন তাঁকে দেখাতে। কাগজ দেখে চমকে উঠলেন আলিবর্দী। কাগজগুলি রেখে দিলেন নিজের হেফাজতে। নিজের জীবন বাজি রেখেও খাজাঞ্চি কাগজগুলি রক্ষা করেছিলেন বলে নবাব আলিবর্দী খাঁ তাঁকে পুরস্কৃত করলেন। খাজাঞ্চির বিশ্বস্ততার কথা স্মরণ করে তাঁকে বিশ্বাস উপাধি দিলেন। সেই থেকে গঙ্গোপাধ্যায় পদবি ছেড়ে বিশ্বাস ব্যবহার করতে শুরু করলেন খাজাঞ্চি। কাগজগুলি রক্ষা করতে খাজাঞ্চি আহত হয়েছিলেন। আহত শরীরে আর নবাবের কাছে না থেকে তিনি চলে এলেন পূর্ব বর্ধমানের দিগনগরে। এখানে এসে তসরের ব্যবসা শুরু করলেন। বিশ্বাস পরিবারের সদস্য রামমোহন বিশ্বাসের আমলে ব্যবসায় শ্রীবৃদ্ধি হল। কিন্তু রামমোহন ছিলেন নিঃসন্তান। বংশের উত্তরাধিকারী নিয়ে চিন্তায় পড়েন তিনি। এ ব্যাপারে তিনি গুরুদেবের শরণাপন্ন হলে গুরুদেব তাঁকে নির্দেশ দেন মানকরে গিয়ে দুর্গা পুজো করার। রামমোহন তাঁর সমস্ত সম্পত্তি গুরুদেবকে সমর্পণ করে মানকরে এসে ছোট এক চালার ঘরে শুরু করলেন দুর্গাপুজো। মা দুর্গার আশীর্বাদে সন্তান লাভ করলেন। সন্তানের নাম দিলেন দুর্গাদাস বিশ্বাস। সেই থেকে দুর্গাপুজো শুরু। এবার ৩২১ বছরে পদার্পণ করেছে বিশ্বাস বাড়ির পুজো। পরিবারের সদস্য সুজিত বিশ্বাস, অরুণ বিশ্বাস বলেন, এখানে দেবীর কাঠামো পুজো হয় উল্টোরথের দিন। পুজো শুরুর আগে কুললক্ষ্মীকে দেবীর পাশে নিয়ে আসেন বাড়ির মহিলারা। তবে মহিলাদের দেবীর ভোগ রান্না করার অধিকার নেই। ব্রাহ্মণ পুরুষরা মায়ের ভোগ রান্না করেন। ভোগে রয়েছে বিশেষ নিয়ম। সপ্তমীতে সাত সের, অষ্টমীতে আট সের ও নবমীতে নয় সের চালের নৈবেদ্য দেবীকে নিবেদন করা হয়। এছাড়া সপ্তমীতে সাত রকম, অষ্টমীতে আট রকম ও নবমীতে নয়রকম ভাজা দেবীকে দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্য তপন বিশ্বাস বলেন, সপ্তমীর দিন থেকে একটি প্রদীপ দেবীর সামনে জ্বালিয়ে রাখতে হয়। নজর রাখা হয় সেটি যেন না নেভে। বিশ্বাস বাড়ির অষ্টমী পুজো বিখ্যাত। একসময় কামান দেগে অষ্টমী পূজার সূচনা হতো। কিন্তু বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা দেবীর মন্দিরে দুর্ঘটনার পর থেকে কামান দাগা হয় না। তবে আজও শূন্যে গুলি চালিয়ে সন্ধিপুজোর সূচনা হয়। ঠাকুর দালানের চারদিকে চার ব্যক্তি মশাল হাতে দাঁড়ান। জ্বালানো হয় ১০৮টি প্রদীপ। নবমীর দিন নরনারায়ণ সেবার ব্যবস্থা করা হয়। সন্ধিপুজো দেখতে বহু মানুষ আসেন বিশ্বাস বাড়িতে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)