• তিনদিন পর নবান্নে এসেও সম্প্রচারের শর্তে বৈঠক ভেস্তে দিলেন ডাক্তাররা, ক্ষমা করলাম: মমতা
    বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও বিধাননগর: পরপর তিনদিন। ‘খোলা মনে আলোচনার’ আহ্বান খোদ নবান্ন থেকে। বৃহস্পতিবার সময় ছিল বিকেল পাঁচটা। তখন থেকেই নবান্ন সভাঘরে অপেক্ষায় বসে রয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্যভবন চত্বরে অবস্থান মঞ্চ থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের আসার কথা। ৫টা ২৩ মিনিটে তাঁরা পৌঁছেও গেলেন রাজ্য প্রশাসনের পাওয়ার সেন্টারে। পুলিস রীতিমতো এসকর্ট করে নিয়ে গেল তাঁদের বাস। কিন্তু তীরে এসেও নোঙর ফেলতে তরী অস্বীকার করল। শুধুমাত্র সরাসরি সম্প্রচারের শর্ত চাপিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে যোগ দিলেন না ডাক্তাররা। অথচ, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের এদিনের ই-মেলে স্পষ্ট বলা ছিল, সর্বাধিক ১৫ জন আসবেন। এবং বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার সম্ভব হবে না। তারপরও ৩২ জন জুনিয়র ডাক্তার এসেছিলেন নবান্নে। প্রশাসন তাঁদের প্রত্যেককে বৈঠকে যোগ দেওয়ার অনুমতিও দিয়েছিল। কিন্তু লাইভের শর্ত থেকে নড়লেন না তাঁরা। সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন মামলার লাইভ স্ট্রিমিং করার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতার কথা মানলেন না জুনিয়র ডাক্তাররা। ফল? অচলাবস্থা কাটল না। দু’ঘণ্টা অপেক্ষার পর সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে বললেন, ‘আমি অপেক্ষা করেছিলাম। পরপর তিনদিন। ওঁরা আসেননি। প্রত্যেকে আমার ছোট ছোট ভাইবোন। ওঁদের ক্ষমা করলাম।’ একইসঙ্গে আবার হাত জোড় করে তাঁর আবেদন, ‘কাজে ফিরুন’।

    দু’দিন ধরে স্বাস্থ্যভবন চত্বরে আন্দোলনের চেহারা দেখে অনেকেরই একে রাজনৈতিক মঞ্চ বলে ভুল হচ্ছে। বিক্ষোভস্থল থেকে ভেসে আসছে তৃণমূল এবং রাজ্য বিরোধী স্লোগান, ফ্লেক্স। তারপরও যে বিষয়টিকে তিনি রাজনৈতিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে দেখবেন না, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘আন্দোলনে আমার জন্ম। তাই ওদের আন্দোলনের প্রতি আমার পূর্ণ সম্মান আছে। তিলোত্তমার বিচার চেয়ে সাধারণ মানুষের আবেগকে আমি মর্যাদা দিই।’ তারপরও তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন নাগরিক হিসেবে, চিকিৎসক হিসেবে আন্দোলনরত ‘ছোট ছোট ভাইবোনদের’ শপথকে। চেষ্টা করেছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, ডিজি রাজীব কুমার এবং স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীও। বাইরে বেরিয়ে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জুনিয়র ডাক্তারদের বুঝিয়েছেন তাঁরা। বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী পাঁচটা থেকে অপেক্ষা করছেন। আসুন, আলোচনায় বসি। কিন্তু সরাসরি সম্প্রচারের শর্ত থেকে নড়েননি আন্দোলনকারীরা। মুখ্যমন্ত্রী পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনও বলেছেন, ‘ওরা সবাই আলোচনার বিরোধী নয়। কেউ কেউ বাইরে থেকে হয়তো ভুল বোঝাচ্ছে। ভুল পরামর্শ দিচ্ছে। তারা বুঝতে চাইছে না, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানাটাই আইন।’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তদন্ত এখন আর আমাদের হাতে নেই। সিবিআই তদন্ত করছে। তাদের কাছে আমাদেরও দাবি, দ্রুত বিচার শেষ হোক। এদিন আলোচনায় অনেক কথা উঠে আসতে পারত। বিচারাধীন মামলা বা তদন্ত সংক্রান্ত বিষয় যদি লাইভে চলে আসে, তার দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না। তাই সরাসরি সম্প্রচার করতে পারি না। এনআরএসের ঘটনার সময় এই সমস্যা ছিল না।’ এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া রাজনীতির কারবারিদের ব্যাপারে সতর্কও করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘ওরা বিচার চায় না, চেয়ার চায়। আমি পদত্যাগ করলে যদি তিলোত্তমা বিচার পায়, সাধারণ মানুষ বিচার পায়, আমি তাতেও রাজি।’ মমতার ইঙ্গিত যে কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনীতির কারবারির দিকে ছিল, তাতে সংশয় নেই। এরপরও জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ইঙ্গিত করেই ‘চেয়ারে’র কথাবলেছেন। রাতে তাঁরা বলেন, ‘চেয়ার থেকে নামানোর কথা কখনও বলব না। আমরা এখনও আশাবাদী। এই বিল্ডিং এবং এই চেয়ারের প্রতি ভরসা আছে বলেই আমরা অপেক্ষায় আছি। ৩৩ দিন পথে আছি, প্রয়োজনে আরও ৩৩ দিন থাকব। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, উনি আর আলোচনায় বসবেন না। পদস্থ আধিকারিকরা বসবেন। কিন্তু এরপরও আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশা রাখব আমরা।’
  • Link to this news (বর্তমান)