• নিকাশি নালা থেকে বেরচ্ছে কম্বল-বালিশ! তাজ্জব হাওড়া পুরসভা
    বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: বেরচ্ছিল কাদা-পাঁক। হঠাৎ চারচৌকো নরম কিছু ঠেকল হাতে। টেনেটুনে বের করা হলে দেখা গেল, একটি বালিশ। তার কিছুক্ষণ পর বেরল গায়ে দেওয়ার কম্বল। এরপর একটার পর একটা, বেরিয়েই চলল। তারপর বেরল কাঠের আসবাব। অর্থাৎ শো-কেস, আলমারি, চৌকির ভাঙাচোরা অংশ। 

    নিকাশি নালায় পাঁকের মধ্যে লুকিয়ে বালিশ-কম্বল! তাজ্জব সাফাইকর্মীরা। চোখ কপালে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদেরও। হাওড়া শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও শিবপুরের জমা জল সরাসরি গঙ্গায় ফেলার একমাত্র নিকাশি মাধ্যম ডাবল ব্যারেল চ্যানেল। সেটি পরিষ্কার করতে গিয়েই চোখ চড়কগাছ সবার। 

    ইস্ট ওয়েস্ট বাইপাস সংলগ্ন টিকিয়াপাড়া থেকে সিঙ্গল ব্যারেল চ্যানেল শুরু হয়েছে। ইছাপুরের কাছে গিয়ে সেটি মিশেছে ডাবল ব্যারেলের সঙ্গে। সেখান থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের নীচ দিয়ে হাঁসখালি পোল হয়ে সরাসরি গঙ্গায় গিয়ে পড়েছে তা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ডাবল ব্যারেল চ্যানেল দিয়ে মধ্য হাওড়ার নিকাশির জল সরাসরি গঙ্গায় পড়ে। পাশাপাশি ২১, ২২, ২৩, ৪৩ ও ৪৯ সহ শিবপুরেরও বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের জল এই চ্যানেল দিয়ে নিষ্কাশন করে বের করা হয়। এ বছর আগস্ট মাস থেকে প্রায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে জল জমছে। তারপর জমা জলের সমস্যায় ভুগছে হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। গত কয়েক বছর ধরে জমা জলের ভোগান্তি চলছেই। এ বছর তা চরমে পৌঁছেছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প ব্যবহার করে জল বের করার পরও বেশ কিছু এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে জল জমে থাকছে বলে অভিযোগ পুর নাগরিকদের।

    এ সমস্যা সমাধানে পুরসভা ডাবল ব্যারেল চ্যানেল পরিষ্কার শুরু করে। তা করতে গিয়েই মাথায় হাত সাফাই কর্মীদের। ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইকো পার্কের কাছে ডাবল ব্যারেল চ্যানেল থেকে উদ্ধার হল প্রচুর বালিশ ও কম্বল। জানা গিয়েছে, ডিসেম্বর মাসে ইছাপুর বস্তিতে আগুন লেগেছিল। আসবাবপত্র, কম্বল, বালিশ ইত্যাদি গেরস্থালি দ্রব্য পুড়ে গিয়েছিল। তা অনেকে ফেলে দেন চ্যানেলের মধ্যে। সেগুলো ভিতরে আটকে গিয়ে জলের প্রবাহমানতা দেয় কমিয়ে। তার ফলেই জল জমছে এবং নামছে না বলে পুর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। হাওড়া পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘ডাবল ব্যারেল চ্যানেলের নিকাশি ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার কারণেই হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ছিল। চ্যানেলের ভিতর আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতেই হবে। সাধারণ মানুষকে সচেতন হতেই হবে।’ 

    হাওড়ায় দিনের পর দিন বৃষ্টির জমা জল নিয়ে ভোগান্তির জেরে একসময় পথেও নেমেছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু দেখা গেল, জমা জলের কারণ হিসেবে মানুষের অসচেতনতাও দায়ী। জল নিষ্কাশনের ড্রেনেজ সিস্টেমে জমে থাকা কম্বল-বালিশ সে কথার হাতেকলমে প্রমাণ দিয়ে দিল। কয়েকবছর আগে ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল সল্টলেকে। সে উপনগরীতেও নালা থেকে অনেককিছুর সঙ্গে বেরিয়েছিল একটি ভাঙা ডাইনিং টেবিল। তবে হাওড়া এবং সল্টলেক শুধু নয়। কলকাতার নিকাশি নালা থেকেও নিয়মিত বেরয় বালিশ-কম্বল-ভাঙা আসবাব-বালতি-মগ ইত্যাদি।
  • Link to this news (বর্তমান)