• এসএসকেএম-আর জি কর ইমার্জেন্সিতে ভিড়, ফিরে গেলেন ক্যান্সার আক্রান্ত, ‘রেফার’ ফাঁসে রোগীর পরিজনরা
    বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বৃহস্পতিবার বিকেলবেলার আর জি কর হাসপাতাল। ফাঁকা অবস্থান মঞ্চ। সবেমাত্র বোমাতঙ্ক কেটেছে। দেখা গেল একের পর এক রোগী আসছেন ট্রমা কেয়ার বিল্ডিংয়ে। কারও অভিযোগ, রোগীকে ভিতরে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়েছে। আবার কারও বক্তব্য, ভিতর থেকে চিকিত্সকরা বলছেন, এখনই অন্য জায়গায় নিয়ে যান। বেলার দিকে এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অ্যাম্বুলেন্সের ভিড় জমেছিল। সেখানে রোগীর পরিজনদের বক্তব্য, জরুরি বিভাগ থেকে ওপিডিতে পাঠাচ্ছে। সেখান থেকে ভর্তির কথা লিখে দিচ্ছে। তারপর জরুরি বিভাগ বলছে, অন্য হাসপাতালে চলে যান।

    বিকেলের দিকে আর জি কর হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারের সামনে নিউটাউনের জাহানারা বিবিকে ধরে গাড়িতে তুলছিলেন পরিজনরা। কী হয়েছে? এক আত্মীয় বললেন, ‘সারা শরীরে খিঁচ ধরছে। এখানে নিয়ে এলাম, বলছে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। এখানে দেখলই না। এভাবে কী করে চলবে আমাদের?’ তড়িঘড়ি গাড়ি চালিয়ে তাঁরা উদভ্রান্তের মতো চললেন হাসপাতাল খুঁজতে। পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন ঝুনু দফাদার। পরিষেবা পেলেন? বললেন, ‘আমি ক্যান্সার আক্রান্ত। আমার গলব্লাডারে স্টোন হয়েছে। আজ অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। ডাক্তারবাবু বললেন, আমি কি একা অপারেশন করব? পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, আবার আসবেন। এভাবে আর কতদিন আমাদের ভুগতে হবে?’ একই অভিজ্ঞতা হল শোভাবাজারের প্রতীক রায়চৌধুরীর। ৮০ বছরের বৃদ্ধাকে নিয়ে এসেছিলেন। বলছেন, ‘ভিতরে বলল, ডাক্তার নেই। ভর্তি করার মতো অবস্থায় আমরা নেই। এ কেমন মানবিকতা!’  

    এসএসকেএমে এসেও অনেকেরই তিক্ত অভিজ্ঞতা হল এদিন। বুধবার রাত ২টোয় মেটিয়াবুরুজ থেকে কাকাকে নিয়ে এসএসকেএমের ইমার্জেন্সিতে এসেছিলেন আসিফ মালিক। প্রাথমিক চিকিত্সার পর ভোর সাড়ে ৪টেতে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। বৃহস্পতিবার সকালে সেই এসএসকেএমের জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে আসিফ বলছিলেন, ‘এখানে গ্যাস্ট্রো ওপিডিতে গেলাম। সেখান থেকে সার্জারিতে গেলাম। বলল, এটা সার্জারির বিষয় নয়। গ্যাস্ট্রো থেকে লিখে দিল ভর্তির দরকার। কিন্তু বেড নেই। আবার ইমার্জেন্সিতে এলাম। এখানেও বেড নেই। এখন শম্ভুনাথ পণ্ডিত লিখে দিয়েছে।’ আসিফের কাকা মোস্তাকিমের মুখ থেকে কালো জল বের হচ্ছে। অসহায় আসিফরা তবুও একবার চেষ্টা করছিলেন যদি এসএসকেএমে একটা বেড পাওয়া যায়। জেলা থেকেও রেফার করা রোগী আসছেন এসএসকেএমে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত জলিল মণ্ডলকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে এসএসকেএমে এসেছেন আনোয়ার মণ্ডল। বলছিলেন, ‘ওখান থেকে রেফার করে দিল। এখন জানি না, এখানে ভর্তি নেবে কি না! এখানে না নিলে কী করব জানি না।’ হাওড়ার বাল্টিকুরির বৃদ্ধকে নিয়ে পাপাই মণ্ডল এসেছিলেন। বলছিলেন, ‘ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দিল। পরীক্ষা করাতে দিয়েছে। আবার একদিন রিপোর্ট নিয়ে আসতে হবে। আমরা ক্লাবের লোকেরা নিয়ে এসেছি। উনি একা মানুষ।’ এই চিত্রের বাইরে এমনও কিছু রোগী রয়েছেন, যাঁরা পরিষেবা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)