• পুজোর অনুদানের টাকায় পাড়ায় স্থায়ী সিসি ক্যামেরা, জাঁকজমকের বদলে জোর মহিলাদের সুরক্ষায়
    বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • অভিজিৎ চৌধুরী, চুঁচুড়া: প্রতিবাদের ভাষার বদলে প্রতিরোধের বাস্তবতা। এটাই বলতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ভাবতে হবে। যে ভাবনা উস্কে দিচ্ছে হুগলির প্রান্তিক পাণ্ডুয়ার গ্রাম রামেশ্বরপুরের এক অখ্যাত বারোয়ারি পুজো কমিটি। রাজ্য সরকারের পুজো অনুদান প্রত্যাখ্যান করছে না তারা। তবে সেই টাকা পুজোর বাহুল্যের কাজে ব্যবহার করবে না। পরিবর্তে গ্রামের জনবহুল চারটি মোড়ে ‘রাত পাহারা’র ব্যবস্থা করবে। দক্ষিণপাড়া বারোয়ারির উদ্যোগে চারটি উন্নতমানের সিসি ক্যামেরা বসিয়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের, রাতে কাজ থেকে বাড়ি ফেরা মহিলাদের জন্য হচ্ছে এই ব্যবস্থা।

    সাম্প্রতিক প্রতিবাদী আবহাওয়ায় যা উপস্থিত করছে ভিন্ন আঙ্গিক। উঠছে নতুন প্রশ্নও। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এও এক ভিন্ন স্বর। যাতে প্রতিবাদী হওয়ার বাসনা থেকে অনেক বেশি বাস্তবমুখী, কল্যাণকর সুর বেজে উঠছে। আশ্চর্য সমাপতন এই যে, ক্লাবের এবারের পুজো থিম নারীশক্তি। দেবীকে কন্যারূপে পেতে চাওয়ার, লালন পালনের বাসনা সনাতন বাঙালির। থিমের নাম, ‘কন্যারূপেণ সংস্থিতা’। প্রতিবাদের ঝঙ্কারে শারদীয়ার আকাশে যখন অন্য মেঘের আনাগোনা। তখন রামেশ্বরপুর দক্ষিণপাড়া বায়োয়ারি এক ভিন্ন দর্শনের জন্ম দিয়েও শান্ত থাকছে। সমাজমাধ্যমে তীব্র হইচই নেই, মাইকে প্রচারের আস্ফালন নেই, ক্লাবের ত্রিসীমানাতে নেই অহংকারের কোনও ভাষ্য। আছে ১০৪ বছরের মূল্যবোধ আর বনেদিয়ানার বিরল সুগন্ধ। বারোয়ারির কর্তা চুয়ান্ন বছরের জয়ন্তকুমার ঘোষ। তিনি বলেন, ‘টাকা ফেরানোই যায়। কিন্তু তাতে নারী নিরাপত্তার যে দাবি নিয়ে চর্চা হচ্ছে তার হাল ফিরবে? আমাদের মা, বোনেদেরও নিরাপত্তা চাই। তাই অনুদানের টাকায় পুজোয় বাহুল্য না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি তার সঙ্গে আরও টাকাজুড়ে চারটি উন্নতমানের সিসি ক্যামেরা বসাচ্ছি। আমাদের গ্রামের চারটি জনবহুল মোড়ে তা নজরদারি চালাবে। ক্যামেরার সংযোগ থাকবে পাণ্ডুয়া থানাতেও। এটি আমাদের বারোয়ারির নাগরিকদের সিদ্ধান্ত।’ হুগলির বাসিন্দা সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক প্রিয়ঙ্কর দাস বলেন, ‘ওই মানুষগুলিকে পৃথক সম্মান করা উচিত। তাঁদের ভাবনার গভীরতা বর্তমান সময়ের জন্য সত্যিকারের শ্রদ্ধার্ঘ্য। ওইটিই আসল প্রতিবাদ এবং আন্দোলন।’

    পুজো অনুদান প্রত্যাখানের প্রতিবাদী সুর ভাসছিল হুগলির উত্তরপাড়া, কোন্নগরে। এই দুই বনেদি শহরের থেকে ৫৫ কিমি মাত্র দূরে পাণ্ডুয়া। বনেদিয়ানার বিচারে অনেকটা পিছিয়ে। সেই জনপদের গুটিকয় মানুষের ভিন্ন ‘প্রতিবাদ’, পক্ষে-বিপক্ষের বাংলায় ভাবনার এক নবদিগন্ত খুলে দিচ্ছে, বলাই যায়।
  • Link to this news (বর্তমান)