• রোগীদের কথা ভেবে কাজে ফিরতে ফের বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
    এই সময় | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়: আন্দোলন থেকেই উঠে এসেছেন তিনি। তাই আরজি করের নির্যাতিতার বিচার চেয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা যে আন্দোলন চালাচ্ছেন, তার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে আবারও জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার আবারও আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে আবেদন করলেন মুখ্যমন্ত্রী।আন্দোলনরত চিকিৎসকদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে মমতা জানান, কর্মে বিরতি থাকলেও রোগে কিন্তু বিরতি নেই। পরিষেবার মানোন্নয়ন হলেও কর্মবিরতির জেরে রোগীদের ভোগান্তি দিনদিন বাড়ছে। জটিল রোগের চিকিৎসা যেমন বিলম্বিত হচ্ছে, তেমনই মামুলি রোগীদের ফিরতে হচ্ছে আউটডোর থেকে।

    মুখ্যমন্ত্রী এও জানান যে, এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে উপযুক্ত চিকিৎসা না-পেয়ে। ৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ পরিষেবা পাননি। রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরে তাঁর সওয়াল, বাম আমলের থেকে বাংলায় মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা প্রায় তিন গুণ হয়েছে।

    আন্দোলনকারীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে স্বাস্থ্য কর্তাদের পদত্যাগের দাবিও রয়েছে। এ দিন আন্দোলনরত চিকিৎসকদের বৈঠকে ডেকেছিল নবান্ন। যাতে সে ক্ষেত্রে আলোচনায় কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে দিকে খেয়াল রেখে বৈঠকে স্বাস্থ্য কর্তাদের কাউকে যে তিনি ডাকেননি, তা-ও পরিষ্কার করে দেন মমতা।

    বলেন, ‘ওদের (আন্দোলনকারী) যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য ওদের কথা মতোই আমি এবং চন্দ্রিমা ছাড়া স্বাস্থ্য দপ্তরের কাউকে আমরা ডাকিনি। যাতে তারা খোলামেলা আলোচনা করতে পারে।’ গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানির দিন রাজ্যের তরফে পরিসংখ্যান দিয়ে জানানো হয়েছিল ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলাকালীন কী ভাবে সাধারণ রোগীরা সমস্যায় পড়ছেন। এ দিন সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা ফের বলেন, ‘এটাও ঘটনা, ইতিমধ্যেই ২৭ জন মানুষ মারা গিয়েছেন। ৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ পরিষেবা পায়নি।’

    মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, ‘জুনিয়র ডাক্তাররা অনেকেই কাজ করছেন না গত ৩২ দিন ধরে। মানুষ কিন্তু অপেক্ষা করছেন। দেড় লক্ষেরও বেশি সিরিয়াস কেস পেন্ডিং রয়েছে। এতগুলো মানুষ বিনা চিকিৎসায় রয়েছেন বা বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও আমরা কোনও পদক্ষেপ করিনি।’

    স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কথা বলতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘আমরা জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজ করেছি। অনেকগুলি হাসপাতালে এসএনসিইউ করেছি। বাম আমলে যেগুলো করাই হয়নি, সেই প্রাণঘাতী রোগ থেকে মানুষকে বাঁচানোর ব্যবস্থাও আমরা জেলায় জেলায় করেছি।’

    এর পরেই রোগী মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে মমতার প্রশ্ন, ‘হুগলির কোন্নগরের বিক্রম (ভট্টাচার্য) মারা গেল। দুর্ঘটনায় জখম হয়ে তাঁর দু’টো পা দিয়ে রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছে। তবুও কেউ মায়া করেননি। তা সত্ত্বেও আমরা কাউকে কিছু বলিনি। বিক্রমের মা তো কাঁদছেন। তিনিও তো সন্তানহারা হয়েছেন। কিডনির রোগে ভুগছেন, এমন রোগীর ক্যাথিটার চেঞ্জ করা যায়নি। সেই জন্য রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের জন্য কি আমরা একটা মোমবাতি জ্বালাব না? তাঁদের জন্য কি আমাদের হৃদয় কাঁদবে না?’

    আন্দোলন এবং রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, ‘সিঙ্গুর নিয়ে আমি ২৬ দিন অনশন করেছিলাম। বাম সরকারের কোনও মন্ত্রী আমার সঙ্গে আলোচনা করতে আসেননি। সিঙ্গুরে আমি ১৬ দিন ধর্নায় বসেছিলাম। সরকারের কেউ আসেনি আমার কাছে। (আরজি কর ইস্যুতে) সোশ্যাল নেটওয়ার্কে আমাদের সরকারকে অনেক অপমান-গালিগালাজ করা হয়েছে, অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কিন্তু আমি সবাইকে ক্ষমা করে দিচ্ছি।’
  • Link to this news (এই সময়)