মুখ ফিরিয়েছেন মা-বোনেরা, দিনের পর দিন একই পোশাকে সঞ্জয়, দুর্গন্ধে জেরবার তদন্তকারীরা
প্রতিদিন | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
অর্ণব আইচ: পরিবার পাশে নেই। মুখ ফিরিয়েছেন মা-বোনেরাও। তাই এক মাস ধরে এক পোশাকেই কাটায় সঞ্জয় রাই। সেই পোশাক থেকে এতটাই দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করেছে যে, বুধবার প্রেসিডেন্সি জেলের ভিতর সঞ্জয়ের দাঁতের ফরেনসিক পরীক্ষা করাতে গিয়ে রীতিমতো নাক সিঁটকোতে হয় সিবিআই আধিকারিক ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের। তবে কারা সূত্রের খবর, এক পরিচিতর মাধ্যমে এক মাস পর হাতে নতুন জামা ও ট্রাউজার পেয়ে মুখে হাসি ফুটেছে সঞ্জয়ের। যদিও কারা সূত্রের খবর, সন্দীপ ঘোষের গ্রেপ্তারি শুনেও তার মুখে কোনও ভাবান্তর হয়নি। এমনকী, জেলের ভিতর যে সেলে সঞ্জয় রাই রয়েছে, সেই একই সেলের অন্য ঘরে সন্দীপ ঘোষ রয়েছেন জেনেও সে বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রথমে কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাই। পরে তদন্তভার হাতে পাওয়ার পর তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয় সিবিআই। গত ৯ আগস্ট আর জি করের সেমিনার রুম থেকে নির্যাতিতার দেহ উদ্ধার হয়। এর পরের দিন সঞ্জয় রাইকে গ্রেপ্তার করেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। ধরা পড়ার সময় তার পরনে ছিল একটি টি-শার্ট ও বারমুডা। ওই পোশাকেই সে প্রথম কয়েকদিনের জন্য পুলিশের হেফাজতে ছিল। এর পর সেই একই পোশাকে যে যায় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের দপ্তরে। ১৪ দিন হেফাজতের পর যখন সে শিয়ালদহ আদালতের নির্দেশে জেল হেফাজতে যায়, তখনও তার শরীরে ছিল একই পোশাক। আদালতে তার সঙ্গে দেখা করতে চাননি কেউ। জেল হেফাজতে থাকাকালীন ওই একই পোশাকে ছিল সে। প্রেসিডেন্সি জেলের পয়লা বাইশ সেলের কারারক্ষীরা কাছে এলে তাঁদের সে জানায়, এই একই পোশাক পরে আর থাকা যাচ্ছে না। কষ্ট হচ্ছে। কারারক্ষীরা সঞ্জয় রাইকে জানায়, তাঁর বাড়ি থেকে কেউ এসে অন্য জামাকাপড় দিলে জেলের নিয়ম মেনে তা তাকে দেওয়া যেতে পারে। না হলে তাকে থাকতে হবে একই পোশাকে।
কিন্তু তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্ত সঞ্জয় রাইয়ের বোন ও দিদিরা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন যে, যে কীর্তি সঞ্জয় করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, পরিবারের কেউ তার পাশে দাঁড়াবেন না। ফলে জেল হেফাজতে থাকাকালীন সঞ্জয় রাইয়ের সঙ্গে তার পরিবারের কেউ দেখা করতে আসেননি। তার মা কালীঘাট অঞ্চলের বাসিন্দা। প্রেসিডেন্সি জেল থেকে তাঁর বাড়ি হাঁটা পথ। তবুও মা একদিনের জন্যও ছেলের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। এমনকী, তাঁর দিদি ভাইয়ের ফাঁসিও চেয়েছিলেন। তাই পরিবারের কারও কাছ থেকে আর নতুন বা কাচা কাপড় পাওয়া হয়নি। তাই কোনওমতে ওই একই পোশাক পরে সেলে থাকতে হয়েছে তাকে। এমনকী, পলিগ্রাফ বা দাঁতের ফরেনসিকের সময় সে ছিল সেই একই পোশাকে। তার জামাকাপড় থেকে রীতিমতো দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে বলে খবর। শেষ পর্যন্ত সঞ্জয়ের এক পরিচিত বিষয়টি জানতে পেরে দু’টি জামা ও দু’টি ট্রাউজার কিনে কারা আধিকারিকদের দেন। জেলের নিয়ম মেনেই নতুন পোশাক সঞ্জয় রাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে কারা দপ্তর।