গত কয়েক বছর হুগলিকে রীতিমতো ভুগিয়েছে ডেঙ্গি। প্রাদুর্ভাব বেশি ছিল শহরাঞ্চলে। চলতি বছরে অবশ্য মশাবাহিত এই রোগ তেমন বেগ দেয়নি এই জেলাকে। পুজোর সময়েও যাতে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে, সে ব্যাপারে ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজে ঢিলেমি চায় না প্রশাসন। সেই লক্ষ্যে বুধবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করল জেলা প্রশাসন।
জেলা পরিষদের সভাগৃহে স্বাস্থ্য নিয়ে ওই বৈঠক হয়। প্রাধান্য দেওয়া হয় ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়া নিয়ে আলোচনায়। জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, চলতি সপ্তাহ বছরের ৩৭তম। এই সময়ে ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি হওয়ার আশঙ্কা (হাই টাইম) থাকে বলে ধরা হয়। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে সতর্ক করে বলা হয়, সেই পরিস্থিতি যাতে না হয়, সে দিকে নজর দিতে। কোথাও জল জমলে দ্রুত সরানোর বন্দোবস্ত করতে হবে। জল জমতে পারে, অর্থাৎ, মশা জন্মানোর সম্ভাব্য জায়গা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্ন স্টেশন লাগোয়া এলাকায় বেশি করে নজরদারি চালাতে হবে। পুরসভাগুলিকে বলা হয়, অব্যবহৃত বা নির্মীয়মাণ আবাসনে, বন্ধ বা পরিত্যক্ত কল-কারখানা নজরে রাখতে। কারণ, ওই সব জায়গায় মানুষের যাতায়াত কার্যত না-থাকায় জল জমে মশা জন্মানোর আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়। বিভিন্ন পুজো কমিটি, বাজার কমিটির সঙ্গেও কথা বলে এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সতর্ক করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিক বা জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে (১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) হুগলিতে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৬৬৯ জন। গত কয়েক বছরে এই সময়ে ওই সংখ্যা ছিল কয়েক গুণ বেশি। গত বছর (জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর) আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮২৮৬ জন। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৫২৪ জন। প্রশাসনের আধিকারিকদের দাবি, ডেঙ্গি চিহ্নিত করার জন্য এ বার জ্বরের রোগীর রক্ত পরীক্ষায় যথাসম্ভব বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল। ৩৫ হাজারের বেশি জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত এক জনপ্রতিনিধির কথায়, পরিস্থিতি সন্তোষজনক হলেও বিশেষত পুজোর সময়ে ঢিলেঢালা মনোভাবের খেসারত যাতে দিতে না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে জেলাশাসক মুক্তা আর্য ছাড়াও প্রশাসনের অন্য আধিকারিক, জেলা সভাধিপতি রঞ্জন পাত্র, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃগাঙ্কমৌলি কর-সহ স্বাস্থ্য দফতরের অন্য আধিকারিক, বিভিন্ন পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের পুর-পারিষদ বা আধিকারিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। একাধিক মহকুমাশাসক, বিভিন্ন ব্লকের বিডিও ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকে যোগ দেন।
প্রশাসনের খবর, চলতি বছরে জেলায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন বলাগড় ব্লকে। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২২১ জন। তার পরে ধনেখালি ব্লকে ৩৮ জন। তার পিছনে সিঙ্গুর ও চুঁচুড়া-মগরা। শহরাঞ্চলে ডেঙ্গি আক্রান্তের পরিসংখ্যান প্রশাসনকে অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে। চলতি বছরে গোটা জেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৬ জন।