• সকালে সংবাদপত্র বিক্রি, বিকেলে বিনামূল্যে খেলাধুলোর প্রশিক্ষণ দেন শ্যামল গোস্বামী
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, মানকর: আয় তাঁর যৎসামান্য। তবু এলাকার কোনও ছেলে বা মেয়ের খেলাধুলোর অগ্রগতির জন্য সেই উপার্জনটুকুও খরচ করে দিতে দ্বিধা করেন না। তিনি গলসির শ্যামল গোস্বামী। পেশায় খবরের কাগজ বিক্রেতা। যুব সমাজ যখন মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে, তখন শ্যামলবাবুর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এলাকায় খেলাধুলোর প্রসারে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। 

    প্রতিদিন ভোর ৩টেয় ঘুম থেকে ওঠেন শ্যামলবাবু। তারপর বর্ধমান থেকে সংবাদপত্র নিয়ে এসে এলাকার বাড়ি বাড়ি দিয়ে আসেন। পরে ঘুরে ঘুরে কাগজ বিক্রি করেন। শ্যামলবাবু বলেন, কাগজ বিক্রি শেষ হতে প্রায় ১১টা বেজে যায়। বাড়ি ফিরে কাজ সেরে খাওয়া দাওয়া করি। একটু বিশ্রাম নিয়েই চলে আসি মাঠে। শীতকালে দুপুর আড়াইটা, গ্রীষ্মকালে বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। 

    জানা গিয়েছে, শ্যামলবাবুর কাছে নিয়মিত ২০জনেরও বেশি ছেলেমেয়ে প্রশিক্ষণের জন্য আসে। তবে যখন আন্তঃক্লাব, আন্তঃকলেজ ইত্যাদি প্রতিযোগিতা শুরু হয় তখন সেই সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়ে যায়। শ্যামলবাবু বলেন, ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ ছিল। দেশ বিদেশের খেলার খবর পাওয়ার জন্য নিয়মিত খবরের কাগজ পড়তাম। বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময়েই কাগজ বিক্রির পেশার সঙ্গে যুক্ত হই। সেই সময় মাত্র ৫০টি কাগজ বিক্রি করতাম। এখন ব্যবসা বেড়েছে। তবে খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ কমেনি। 

    শ্যামলবাবু যুক্ত রয়েছেন বর্ধমান রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে। ফুটবল প্রতিযোগিতার মরশুমে বাঁশি হাতে তিনি মাঠে রেফারির ভূমিকাও পালন করেন। সময়ের নিয়মে বয়স বাড়লেও আজও আগের মতো বিকেল হলেই তাঁর মন টানে খেলার মাঠ।  

    শ্যামলবাবুর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই ব্লক, জেলা এমনকী রাজ্যস্তরে কৃতিত্বের ছাপ রেখেছেন। যেমন ছোট্টু বাগ রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, স্যারের কাছে বিকেলে না এলে আমরা থাকতে পারি না। খেলাধুলো নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য স্যার খুব উৎসাহ দেন।

    প্রশিক্ষণ নেওয়া শেখ সানিয়া, সম্রাট হাঁড়ি বলেন, এখান থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে জেলাস্তরে সাফল্য লাভ করেছি। 

    তবে এই প্রশিক্ষণের জন্য কোনও পারিশ্রমিক নেন না শ্যামলবাবু। কেন এমন উদ্যোগ? শ্যামলবাবু বলেন, বলতে পারেন খেলার খিদে! কিছু পাওয়ার আশায় এটা করি না। মন থেকে অনুভব করি আমি যা শিখেছি তা পরবর্তী প্রজন্মকে শিখিয়ে দেওয়া উচিত। সেটাই করে চলেছি।

    কোভিডের সময়ে অনেকেই খবরের কাগজ নেওয়া বন্ধ করেছিলেন। সেই সময়ে শ্যামলবাবুর উপার্জনও কমে গিয়েছিল। তবু যেটুকু আয় করতেন, তা সঞ্চয় করেছিলেন প্রশিক্ষণ নেওয়া ছেলে-মেয়েগুলির কাজে লাগবে বলে। আজ অবশ্য ফের বেড়েছে সংবাদপত্রের বিক্রি। তা দিয়েই মনের খিদে মিটিয়ে চলেছেন শ্যামলবাবু। তিনি বলেন, আমি চাই ওরা মানুষ হোক। বড় হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করুক।

    শ্যামলবাবুর দুই ভাই দিলীপ গোস্বামী ও ভূদেব গোস্বামী বলেন, আমরা দাদার এই কাজে বাধা দিই না। বরং পাশে থাকার চেষ্টা করি। পুরষার বাসিন্দা নাজমুল জামাদার বলেন, বর্তমান সময়ে যেখানে শিশু থেকে বড়রা সকলেই মোবাইলে আসক্ত। যুব সমাজেও যেভাবে নেশার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এলাকার ছেলে-মেয়েদের খেলার মধ্যে দিয়ে অন্যভাবে বাঁচতে শেখাচ্ছেন শ্যামলদা। 
  • Link to this news (বর্তমান)