• শিলদার সুব্রতর তৈরি শোলার গয়না পাড়ি দিচ্ছে আমেরিকায়
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্ৰামের বাসিন্দা সুব্রত দে দুর্গাপ্রতিমার শোলার গয়না বানান। দেশের সীমানা পেরিয়ে এবার তাঁর কাজ পাড়ি দিচ্ছে বিদেশে। শোলার গয়না এককল্কা, পাঁচকল্কা, আটবাংলার পুনরুজ্জীবন ঘটছে। ‌বাড়ি লাগোয়া ছোট দোকন ঘরে দিনরাত প্রতিমার গয়না তৈরির কাজ চলছে। পুজোর মরশুমে স্থানীয় যুবক যুবতীরাও সেই কাজে হাত লাগিয়েছেন। শিল্পসৃষ্টির পাশাপাশি রোজগারও হচ্ছে শিলদার তরুণ শিল্পীদের।

    দুর্গাপুজোর ছ’ মাস আগে থেকেই প্রতিমার শোলার গয়না তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও দেশের অন্য প্রান্ত থেকেও অর্ডার আসতে শুরু করে। প্রথমে গয়না তৈরির প্রয়োজনীয় সামগ্ৰী সংগ্ৰহ করতে মোটা অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন হয়। জমানো টাকা ছাড়াও মহাজনদের থেকে ঋণ নিতে হয়। অর্ডার বেশি থাকলে কাঁচামালের খরচ ও শ্রমিকদের বেতন দিয়েও লাভ থাকে। বিনপুর-২ ব্লকের শিলদার বাসিন্দা সুব্রত দে শোলার গয়না তৈরি করে ইতিমধ্যে দেশ বিদেশে পরিচিতি লাভ করেছন। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয়। অন্য শিল্পীর কাছে মাটির প্রতিমা তৈরির কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে প্রতিমার শোলার গয়না তৈরির কাজে মনোনিবেশ করেন। অল্পসময়ের মধ্যে শোলার শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সুব্রত দে বলেন, যখন দশম শ্রেণিতে পড়তাম বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর থেকে আর কাজকর্ম করতে পারতেন না। মাকে সংসারের হাল ধরতে হয়। আমিও কাজকর্ম করতে শুরু করি। প্রথমে মাটির প্রতিমা বানাতাম। পরে প্রতিমার শোলার গয়না তৈরির কাজ শুরু করি। গত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রে শোলার গয়না পাঠাচ্ছি। বিদেশে আগে কিছু গয়না পাঠিয়েছিলাম। তবে আমেরিকার আটলান্টায় এবার আমার তৈরি চারটে দুর্গা ও বাংলাদেশের দুটো দুর্গা প্রতিমার সমস্ত গয়নার অর্ডার পেয়েছি। বাড়ি লাগোয়া ছোট দোকান ঘরেই মুকুট, এককল্কা, পাঁচকল্কা, আটবাংলা শোলার গয়নাগুলো তৈরি করা হয়। পুজোর মরশুমে স্থানীয় যুবক যুবতীরা এই কাজে যুক্ত হন। এছাড়া আমার কাজের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য জেলার শোলা শিল্পীদের কাছে কাঁচামাল পাঠিয়ে দিই। সেখানেও গয়না তৈরি হয়। চেইন সিস্টেমে মোট ষাটজন এই বছর কাজ করছেন। শুরুতেই কাঁচামাল কিনতে মোটা টাকা লাগে। এই বছর মায়ের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জমানো টাকা কাজে লেগেছে।এই কাজে শিল্পসৃষ্টির আনন্দের সঙ্গে কর্মসংস্থানও হচ্ছে। মা অসীমা দে বলেন, ছেলে দেশ বিদেশে নাম করেছে দেখে ভালো লাগছে। তবে সরকার শোলা শিল্পীদের আর্থিক সহায়তা দিলে ভালো হয়। মৌসুমী পাল বলেন, পুজোর মরশুমে এখানে কাজ করে কিছু রোজগার হয়। কাজটাও শিখতে পারছি। অল্পবয়সিরা অনেকেই এই কাজে আগ্ৰহ দেখাচ্ছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)