• ‘উৎসবে ফিরছি না’ আওয়াজে আতঙ্ক বড় বাদ্যকর পাড়ায়
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: কথায় বলে ‘ঢাকে কাঠি পড়া’। অর্থাৎ উৎসব শুরুর ঘোষণা। এবছর কিন্তু পুজো এসে গেলেও ‘ঢাকে কাঠি পড়া’ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকে গিয়েছে। ঢাকি পাড়াগুলিতে শোকের ছবি। ঢাকিদের দাবি, পরিচিত পুজোমণ্ডপগুলিতে বায়না চাইতে গেলে মিলছে না। বলা হচ্ছে, ‘আন্দোলন চলছে ঢাক বাজবে কিনা দেখি’! যা রীতিমতো আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে বাদ্যকর পাড়াগুলিতে। পুজোর পাঁচদিনের উপার্জনেই তো পরিবারের সদস্যরা নতুন পোশাক পায়। পুজো মণ্ডপে পাওয়া বখশিসে কয়েকটা দিন দারিদ্র ভুলে থাকে পরিবারের সদস্যরা। এবার কি পুজোর বায়না হবে না! ভেবে ভেবে ঘুম উড়েছে ঢাকিদের। তাঁদের আর্জি, বিচারের দাবি করুন কিন্তু উৎসব বন্ধ করবেন না। উৎসব বন্ধ হলে আমাদের বাড়িতে হাঁড়ি চাপবে না। আসানসোল পুরসভার মেনধেমো এলাকায় রয়েছে বড় বাদ্যকরপাড়া। অত্যন্ত দরিদ্র পাড়ার মানুষগুলো। পুজোয়, বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে ঢাক বাজিয়ে, আর অন্য সময়ে রাজমিস্ত্রি, রাধুনিদের হেল্পারের কাজ করে সংসার চলে। পুজোর এক মাস আগেই থেকে উৎসবের আমেজ লেগে যায় পাড়াগুলিতে। সবার মুখে চওড়া হাসি। জানে, মা দুর্গার কৃপায় বাড়তি উপার্জন হবে, নতুন জামা হবে। ঢাকিরা ঢাক তৈরির কাজ শুরু করে দেন। শুক্রবার গিয়ে কিন্তু দেখা গেল হতাশার ছবি। সামনেই মনসা পুজো, তাই ত্রিপল টাঙানো হলেও মানুষের মুখে হাসি নেই। মনসা মন্দিরে বসেই আক্ষেপ করছিলেন সমীর বাদ্যকর। তিনি বলেন, আসানসোলের চিত্রা এলাকায় যে পুজো মণ্ডপে এতবছর ঢাক বাজিয়ে আসছি তাদের কাছে বায়না চাইতে গিয়েছিলাম। উদ্যোক্তারা অগ্রিম টাকা দিলেন না। বলছে, আর জি করে কী হয় দেখ! আরে আর জি করের আন্দোলন দেখলে কি আমাদের পেট ভরবে। আমরাও দোষীদের শাস্তি চাই, কিন্তু উৎসব বন্ধ হলে যে আমরা শাস্তি পাব। 

    বাইরের লোক দেখেই ছুটে এলেন  চূড়া বাদ্য‌কর। জানতে চাইলেন, পুজোর বায়না দিতে এসেছেন? না, শুনে মন খারাপ। তাঁর দাবি, এক একজন ঢাকি ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা পা‌‌ন। যাঁদের বাড়ির দু’ থেকে চারজন সদস্য বাজাতে যায়, তাঁদের অনেকটা রোজগার হয় পাঁচদিনে। যা দিয়ে কিছুদিন আমরা ভালো থাকি। 

    ঢাকিদের থেকে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুজো শুধু পাঁচদিনের রোজগারই নয়, নিজেদের মুনশিয়ানা দেখানোর জায়গা। ঢাকের বোল ভালো লাগলে অনেকে বখশিস দেন। কেউ বিয়ে বাড়ির জন্য‌, ঩কেউ অন্য অনুষ্ঠানের জন্য অগ্রিম বুকিং করেন। তাই এই পুজোর দিকে তাকিয়ে থাকেন রাজ্যের প্রতিটি ঢাকি। এখন মহিলারা ঢাক বাজানোরা কাজে নেমেছেন। মেনধেমোর বাদ্যকর পাড়ার মহিলাদেরও সেই পরিকল্পনা ছিল। সেই স্বপ্নেও জল ঢালার জোগাড়। ‘উৎসবে ফিরছি না’ আওয়াজ গরিব মানুষগুলোর মুখে চিন্তার ভাঁ‌জ ফেলেছে।
  • Link to this news (বর্তমান)