• রাতে সঙ্গিনী সহ দাপিয়ে বেড়াত সিন্ডিকেট বাহিনী
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান:  নিয়ম অনুযায়ী সন্ধ্যার মধ্যেই মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। সেটা হতোও। সন্ধ্যায় আধিকারিকরা অফিস বন্ধ করে বাড়ি যেতেন। কিন্তু মাঝরাতে আবার খুলত গেট। সৌজ঩ন্যে উত্তরবঙ্গ সিন্ডিকেট। এমনটাই বলছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। তাঁরা বলেন, রাত দেড়টা, ২টো নাগাদ আচমকা হাজির হতো বাইক বাহিনী। থাকতেন সঙ্গিনীরাও। গেট খুলে তাঁরা উপরে চলে যেতেন। আলো জ্বলে উঠত। ভোরে আবার বাইক বাহিনী বেরিয়ে যেত। অনেকেই তা দেখতেন। কিন্তু কেউ তা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস পেতেন না। আন্দোলনকারী চিকিৎসক গৌরাঙ্গ প্রামাণিক বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সামনে আনলে এসব কুকীর্তি সামনে আসবে। একটি ফুটেজ ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গভীর রাতে অভীক দে কলেজ পায়চারি করছেন। সব ফুটেজ সামনে এলে তাঁর সঙ্গীদেরও দেখা যাবে। এক চিকিৎসক বলেন, সিন্ডিকেটে থাকা তিন-চারজন কোনও কিছুর তোয়াক্কা করতেন না। তাঁরা অভীকের নাম ভাঙিয়েই সবকিছু করতেন। সব সময় ‘দাদা’র ভয় দেখাতেন। ওই চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্ত কমিটি তা খতিয়ে দেখছে।

    মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, অমলেন্দু দে, উমর ফারুখ সহ ১৮ জন চিকিৎসকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কলেজে ঢুকতে পারবেন না। জুনিয়র চিকিৎসকরা তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছেন। ড্রপবক্সে এখনও অনেকেই অভিযোগ করছেন। সেই সমস্ত অভিযোগগুলি যাচাই করে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা করার পরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আন্দোলনকারীরা বলেন, কয়েকজনের জন্য কলেজের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। গভীর রাতে তাঁরা কলেজের প্রশাসনিক ভবনে এসে গেট খুলতে বাধ্য করতেন। গেস্টহাউসে গিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত পার্টি চলত। সিন্ডিকেটের হাত মাথায় থাকায় কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের বাধা দেওয়ার সাহস দেখাত না। তবে আরজি করের ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে। গেস্টহাউসে তালা দেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, কলেজের প্রয়োজন ছাড়া গেস্টহাউস খোলা হবে না। কেউ ব্যক্তিগত কাজে তা ব্যবহার করতে পারবেন না। আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, প্রশাসনিক ভবনে দু’টি গেট রয়েছে। একটি বড় গেট। সেটির পাশেই আছে ছোট গেট। ওই ছোট গেটের চাবি উত্তরবঙ্গ সিন্ডিকেটের কব্জায় থাকত। যখন খুশি তাঁরা গেট খুলে এসে পার্টি করতেন বলে অভিযোগ। জন্মদিন বা আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠান ছাড়াও অন্যান্য পার্টিও চলত। ভোরের দিকে পার্টি শেষে তাঁরা গেস্ট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতেন। সিন্ডিকেটের কয়েকজন এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তাঁরা কলেজে ঢুকতে না পারলেও বাইরে থেকে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ।
  • Link to this news (বর্তমান)