• স্বাস্থ্যভবনে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মসূচি: অরাজনৈতিক আন্দোলনে বাম-রামপন্থীদের ‘ভিড়’, প্যারোডিতে চলছে অবস্থান বিক্ষোভ
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: ‘অভয়া’র সুবিচারের দাবিতে আন্দোলন! স্বাস্থ্যভবনের সামনে চারদিন ধরে চলছে জুনিয়র চিকিৎসকদের অবস্থান বিক্ষোভ। অরাজনৈতিক আন্দোলন বলে বিজেপির এক বিধায়ক নেত্রীকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হলেও, অতিই হোক বা পাতি, বামেদের এখানে ‘প্রবেশ অবাধ’! দেখা গিয়েছে একঝাঁক বাম নেতা-কর্মীদের। তাই রঙহীন আন্দোলন ক্রমশ ‘লাল’ হচ্ছে। তবে গেরুয়া রং যে মিলছে না, এমনটা নয়। কখনও বিজেপির যুবমোর্চার রাজ্য সম্পাদিকা আবার কখনও উত্তর কলকাতা যুবমোর্চার সভাপতিকে ‘সহমর্মিতা’ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।  

    অবস্থান বিক্ষোভে সুবিচার চেয়ে স্লোগানের চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী, পুলিস কমিশনার, স্বাস্থ্যদপ্তরকে ব্যঙ্গ করে প্যারোডি চলছে জোরকদমে। যাঁরা সহানুভূতি দেখিয়ে আন্দোলনকারীদের খাবার জোগাচ্ছেন, তাঁদের খাবার নিয়েই টেবিল সাজিয়ে যেন ‘খাদ্যমেলা’। আন্দোলনকে সহমর্মিতা জানাতে এসে হাত পাতলেই মিলছে লাঞ্চ, শুকনো ফল এমনকী ফলের জুসও!

    আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আগেই সময় বেঁধে দিয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সেই নির্দেশকে ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়েই চলছে আন্দোলন। বৃহস্পতিবার নবান্নে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেননি তাঁরা। তাই স্বাভাবিকভাবেই অনেকে প্রশ্ন তুলে বলছেন, আন্দোলনকারীরা চাইছে কী? সুবিচার নাকি অন্যকিছু? ধর্ষক ও খুনিদের ফাঁসির দাবি জোরাল হওয়ার চেয়ে লাইভ স্ট্রিমিং প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি। লালবাজারে বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে গো ব্যাক স্লোগান দিয়েছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যভবনের সামনে বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পল হাজির হলে তাঁকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হয়। তবে, ওইদিন বিকেলেই বামপন্থী অভিনেতা চন্দন সেন গেলে তাঁকে ঘিরে কোনও স্লোগান নেই! শুধু চন্দনবাবু কেন? দেখা গিয়েছে বাম অভিনেতা বাদশা মৈত্র, নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়, নকশাল নেত্রী রুমেলা কুমার সহ অনেকেই।  ভাঙড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র বিরোধী আন্দোলন থেকে শিরোনামে উঠে আসা কয়েকজন ‘রেড স্টার’কেও। আন্দোলনের নেতৃত্বদের মধ্যে রয়েছেন খোদ ডিএসও’র রাজ্য কমিটির নেতা অনিকেত মাহাত!

    এরপরেও অবশ্য রাজনৈতিক আন্দোলন বলতে নারাজ জুনিয়র চিকিৎসকরা। শুক্রবার সন্ধ্যার পর সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, যাঁরা এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইছেন, এর আগে তাঁদের মধ্যে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও অগ্নিমিত্রা পলকে গো ব্যাক স্লোগান দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলনেতা আমাদের কালিমালিপ্ত করতে চাইছেন। যদিও বামপন্থীদের উপস্থিতির প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন তাঁরা। তবে, এলাকার মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয়নি!

    এদিন বিকেলে বৃষ্টি হয়েছে। তাই সন্ধ্যার নামার আগেই রাস্তায় নেমেছে বাঁশ। রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন চলছিলই। তাতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের অন্ত ছিল না। তার সঙ্গে নতুন সংযোজন রাস্তা দখল করে প্যান্ডেল! অনেকে বলছেন, মানুষের দুর্ভোগে তাঁদের কী আসে যায়? একমাসের বেশি সময় কাজ বন্ধ রাখায় লক্ষ লক্ষ মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। মারা গিয়েছেন, ২৯ জন। এই আবর্তে ‘রোগী প্রেমী’ হতে চেয়ে আন্দোলনের একপাশে এদিন সকাল থেকেই খোলা হয়েছিল, ‘অভয়া ক্লিনিক’! রোগীরা অবশ্য জানেনই না! বিকেল ৪টের সময় তাঁরা দাবি করলেন, সেখানে এসেছেন ৫২! যদিও একমাসের বেশি আন্দোলনে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে ১০ লক্ষের কাছাকাছি গরিব মানুষ!
  • Link to this news (বর্তমান)