• বারবার ডাহা ফেল সত্ত্বেও কেন নারকো টেস্ট আঁকড়ে সিবিআই
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সিঙ্গুরের তাপসী মালিকের মৃত্যু বা দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলা দেওয়া নির্ভয়া কাণ্ড, প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের নারকো টেস্ট করিয়েছে সিবিআই। যাতে  তদন্তে নতুন তথ্য বেরিয়ে আসে। কিন্তু রিপোর্ট আসার পর সবক্ষেত্রেই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। নতুন তথ্য আসা তো দূর, উল্টে মামলা বিগড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আদালত গ্রাহ্য না হওয়ায় মান বেঁচেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সির। এই  পরীক্ষাকেই খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে না রেখে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও তদন্তকারীদের মেধা শক্তির উপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

    বিগত কয়েকবছরে এই রাজ্য সহ দেশের নানা প্রান্তে একাধিক ঘটনার তদন্তভার আদালতের নির্দেশে গিয়েছে সিবিআইয়ের কাছে।  তার মধ্যে খুন, ধর্ষণ, গণধর্ষণের ঘটনার তদন্ত আছে। আবার জালিয়াতি, দুর্নীতির তদন্তও তারা করেছে।  তদন্তভার নিলেই ছকে বাঁধা ফর্মুলার বাইরে তারা বেরোতে চায় না। প্রথাগত পদ্ধতির বাইরে গিয়ে মাথা খাটিয়ে অন্য পথে বড় একটা হাঁটেন না তদন্তকারীরা। যদিও এজেন্সির অফিসারদের দাবি, তদন্তের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট সহ দেশের বিভিন্ন আদালতের বেশ কিছু নির্দেশ ও ভারত সরকারের নির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। তাঁরা সেগুলি মেনে চলেই কাজ করেন। সেই কারণে সিবিআই তদন্তভার নিলেও, শোনা যায় পলিগ্রাফ, নারকো টেস্ট বা ব্রেন ম্যাপিংয়ের কথা। যা রাজ্য পুলিসের তদন্তে কমই দেখা যায়।

     কিন্তু কতটা সফল সিবিআইয়ের এহেন কৌশল, তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সিঙ্গুরে তাপসী মালিকের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর পর তদন্তভার হাতে নিয়ে একাধিক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও মৃত্যুর কারণ কী বা তাঁকে খুন করল কে, এই প্রশ্নের কোনও জবাব পাননি। শেষ পর্যন্ত নারকো টেস্টের পথে হাঁটে তারা। রিপোর্টে দেখা যায়, যাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, এই ঘটনার সঙ্গে তিনিই যে জড়িত, এমনটা জানা যায়নি। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ ও বয়ানের ভিত্তিতে কেসে ব্রেক থ্রু হয়। দিল্লিতে নির্ভয়াকাণ্ডে দুজনের নারকো করানোর পর টেস্ট রিপোর্টে দেখা যায়, তারা এই ঘটনা ঘটায়নি। ডিজিটাল নথি,গোপন জবানবন্দি, জিজ্ঞাসাবাদ এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজেই জট খোলে। হাতরাসের গণধর্ষণের ঘটনাতেও এরই পুনরাবৃত্তি হয়।  তিন অভিযুক্তের নারকো টেস্টের রিপোর্ট আসার পর সিবিআই জানতে পারে, তারা কেউ ঘটনার কথা স্বীকার করেনি। উল্টে জিজ্ঞাসাবাদে যা বলেছে, তার থেকে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে। এগুলি উদাহরণ মাত্র। সিবিআইয়ের এক আধিকারিকের কথায়, আসলে বিভিন্ন মামলার তদন্তভার যখন তাঁদের হাতে আসে, তাতে নতুন কিছুই থাকে না। যে কারণে তাঁদের অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। তাই অভিযুক্তের কাছ থেকে কথা বের করে নতুন তথ্য সামনে আনার জন্য, নারকো টেস্টে আস্থা রাখা ছাড়া উপায় থাকেনা।
  • Link to this news (বর্তমান)