• ‘খাঁচাবন্দি তোতাপাখি সিবিআই’, ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনা,  ছ’মাস পর জামিন কেজরিকে
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ‘সিবিআইয়ের কাজকর্ম সন্দেহের ঊর্ধ্বে নাকি? আপনাদের সম্পর্কে তো একটি ধারণা রয়েছে যে, আপনারা খাঁচাবন্দি তোতাপাখি! এবার আপনাদের প্রমাণ করতে হবে যে আপনারা খাঁচায় বন্দি নন। খাঁচা থেকে মুক্ত।’ ১১ বছর পর ফের সিবিআইকে পুরনো ‘তকমা’য় বিদ্ধ করল সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করে শুক্রবার দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় দুই বিচারপতির বেঞ্চ জামিনে মুক্তি দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। ২০১৩ সালে কয়লা কেলেঙ্কারি মামলায় প্রথমবার সিবিআইকে ‘খাঁচাবন্দি তোতাপাখি’ বলে কটাক্ষ করেছিল শীর্ষ আদালত। জমানা বদলালেও পুরনো তকমা ঝেড়ে ফেলতে পারল না কেন্দ্রীয় এজেন্সি।

    আম আদমি পার্টি (আপ) সুপ্রিমো অবশেষে জামিনে মুক্তি পাওয়ায় আবগারি দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। কারণ, কেন্দ্রীয় এজেন্সি এই মামলায় হাই প্রোফাইল কিংবা সাধারণ অভিযুক্তদের দীর্ঘদিন জেলে আটকে রাখার মরিয়া চেষ্টা চালালেও আদালত তাঁদের জামিনে মুক্ত করে দিচ্ছে। সেই সঞ্জয় সিং, মণীশ সিশোদিয়া, তেলেঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কে কবিতার পর এবার স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই। চার মাস পর দিল্লির বিধানসভা ভোট। আপের কাছে বিধানসভা নির্বাচনে লাগাতার হেরেই চলেছে বিজেপি। এবার কেজরিওয়াল তিহার জেলে বন্দি থাকায় গেরুয়া শিবির আশায় ছিল। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে জামিনে মুক্ত করে দেওয়ায় নরেন্দ্র মোদির দল দিশাহারা।

    সিবিআইকে এদিন একাধিক প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সাফ জানায়, এফআইআর করার ২২ মাস পর কেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল? এটাই যথেষ্ট সন্দেহের বিষয়। ইডি মামলায় কেজরিওয়াল জামিনে মুক্তি পাবেন বুঝেই তড়িঘড়ি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আমাদের অনুমান। আর কোনও উদ্দেশ্য আমাদের মাথায় আসছে না!’ বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়া উভয়েই সহমত হয়ে নির্দেশ দিয়েছেন জামিনের। যদিও পূর্বনির্ধারিত শর্তের মতোই কেজরিওয়াল প্রশাসনিক সদর দপ্তর সচিবালয়ে উপস্থিত হতে পারবেন না। বিচারপতি ভূঁইয়া অবশ্য এই নির্দেশিকার নীতিগত সমর্থক নন। তবু এই ইস্যুকেই সামনে রেখে বিজেপি বলেছে, এই শর্ত যাঁকে দেওয়া হয়, তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকার যোগ্য নন।

    লোকসভা ভোটের আগে নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে সারিবদ্ধভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বিরোধী নেতানেত্রীদের। ‘ইন্ডিয়া’ জোট লাগাতার অভিযোগ করেছে যে, রাজনৈতিক কারণেই এই গ্রেপ্তারি। বিরোধীদের বদনাম করা এবং ভয় দেখানো—এই দুই লক্ষ্যেই ইডি-সিবিআইয়ের অপব্যবহার করে চলেছে মোদি সরকার। এখন দেখা যাচ্ছে স঩ত্যিই সত্যিই হেমন্ত সোরেন থেকে কেজরিওয়াল, একের পর এক বিরোধী নেতানেত্রী মুক্তি পেয়ে চলেছেন জামিনে। কিন্তু এবার সিবিআইকে ফের পুরনো তকমার কথাই মনে করিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। খাঁচাবন্দি তোতাপাখি! অর্থাৎ সিবিআই তোতাপাখি। খাঁচার মালিক কেন্দ্রীয় সরকার!
  • Link to this news (বর্তমান)