• আর জি করে মৃত্যু রানাঘাটের যুবকের, বিনা চিকিৎসায় মরতে হল ছেলেকে, অভিযোগ বাবার
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ‘আর কত প্রাণ গেলে হুঁশ ফিরবে প্রতিবাদীদের’? প্রশ্ন তুলেছেন সন্তানহারা বাবা। একমাসেরও বেশি সময় ধরে কর্মবিরতিতে জুনিয়র ডাক্তাররা। চিকিৎসা না পেয়ে ঝরে যাচ্ছে একের পর এক প্রাণ। সেই তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন রানাঘাটের নন্দ বিশ্বাস। ২৩ বছরের ছেলের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বাবা কাঠগড়ায় তুললেন চিকিৎসকদের। আর জি কর হাসপাতালে বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় নন্দ বিশ্বাসের। পুত্রশোকে পাথর নন্দর বাবা জ্যোতিষ বিশ্বাসের কাতর প্রশ্ন,আর কত প্রাণ গেলে হুঁশ ফিরবে প্রতিবাদীদের’? তাঁর দাবি,চিকিৎসার গাফিলতিতেই ছেলের মৃত্যু হয়েছে। নন্দর প্রতিবেশীদের প্রশ্ন, জুনিয়র ডাক্তাররা ‘জাস্টিস’ চাইতে রাস্তায় নেমেছেন, কিন্তু ছাপোষা ওই মানুষটি ‘জাস্টিস’ চাইবেন কার কাছে। 

    রানাঘাট ২ ব্লকের গাংনাপুর থানা এলাকার আইসমালি বেলেহাটি পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন নন্দ বিশ্বাস। পেশায় রাজমিস্ত্রি। ২০২২ সালের নভেম্বর নাগাদ বিয়ে করেছিলেন। বর্তমানে তাঁর স্ত্রী চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা। বাড়িতে নতুন অতিথির আগমনের আশায় সবাই যখন আনন্দে উদ্বেল, তখনই বিষাদের সুর। 

    শুক্রবার সকালে নন্দর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সদ্য স্বামীহারা অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অঝোরে কেঁদে চলেছেন। অসুস্থ হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছেন মাঝেমাঝে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বরে কাবু হয়ে পড়েন নন্দ। চিকিৎসার জন্য তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় বনগাঁ হাসপাতালে। সেখান থেকে রেফার করা হয় আর জি কর হাসপাতালে। হাসপাতালের নাম শুনেই বুক শুকিয়ে গিয়েছিল পরিবারের সদস্যদের। বনগাঁ হাসপাতালে বলেও ছিলেন, অন্য কোথাও রেফার করতে। কিন্তু তা না হওয়ায় অগত্যা নন্দকে নিয়ে যাওয়া হয় আর জি করেই। চারদিন সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন ওই যুবক। তাঁর বাবার দাবি, স্যালাইন দেওয়া ছাড়া কার্যত কোনও চিকিৎসাই নজরে আসেনি তাঁদের। চারদিনে একটি বারও আমার চোখে পড়েনি যে, কোনও চিকিৎসক এসে ছেলেকে বা অন্য রোগীদের দেখছেন। চোখে জল নিয়ে প্রৌঢ় বললেন, যদি পরিষেবা ওরা নাই দেবে, তাহলে ভর্তি নিচ্ছে কেন? বৃদ্ধ অথবা রোগে জর্জর হলে বুঝতাম। কিন্তু ২৩ বছরের একটা সুঠাম ছেলে, যে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত দিব্যি কথা বলছিল, ঠিকমতো চিকিৎসা হলে সে এরকম হঠাৎ মারা যায় কীভাবে?  

    বাবার থেকেও বিস্ফোরক মৃতের পিসি কবিতা মণ্ডল। তিনি বলেন, চিকিৎসা যদি ডাক্তাররা ঠিকমতো নাই করবে, তাহলে আর জি কর হাসপাতাল সিল করে দেওয়া উচিত। সবচেয়ে অদ্ভুত কথা, ছেলেটা যখন প্রায় মৃত্যুর মুখে, তখন এক ডাক্তারবাবু এসে বলছেন, বাঁচানো যাবে না, একেবারে শেষবেলায় এনেছেন। অথচ রোগী তাঁদের হাসপাতালে চারদিন ধরে ভর্তি রয়েছে। তাহলে কীভাবে শেষবেলায় আনা হল? আমাদের ভাঁওতা দেওয়া হয়েছে। ঠিকমতো চিকিৎসাই হয়নি ভাইপোর। ডাক্তার খুঁজে বেড়াতে হয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আর কত রোগীর পরিবারকে যেতে হবে জানি না।
  • Link to this news (বর্তমান)