• প্রোমোটারের থাবা এড়িয়ে পৈতৃক ভিটে রক্ষায় ভরসা নাতি-নাতনিরা
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: একান্নবর্তী পরিবার প্রায় অতীত। দাদু, ঠাকুমার স্নেহে বড় হয়ে ওঠা ছেলেমেয়ের সংখ্যাও এখন হাতে গোনা। কিন্তু পৈতৃক বা পারিবারিক সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের তুলনায় নাতি-নাতনিদের উপরেই বেশি ভরসা রাখছেন বর্তমান ‘সিঙ্গল ফ্যমিলি’ কালচারের যুগে দাঁড়িয়ে থাকা দাদু, ঠাকুমারা। 

    ২০২৪ সালের বাজেটে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দানপত্রের রেজিস্ট্রেশনে ছাড় দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্ট্যাম্প ডিউটি সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা করেছে রাজ্য সরকার। ফলে কমেছে দানপত্র রেজিস্ট্রেশনের খরচ। সাধারণ নির্বাচন থাকায় গত জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে এই নতুন নিয়ম লাগু করেছে রাজ্য সরকার। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এই ছাড় চালু হওয়ায় জুলাই আগস্ট মাসে লাফিয়ে বেড়েছে জমি-বাড়ি রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দানপত্রের রেজিস্ট্রেশন। আর এই পরিসংখ্যান ঘেঁটেই সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সামনে উঠে এসেছে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দানপত্র রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত এই ট্রেন্ড। সেখানে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নাতি-নাতনিদের নামে জমি-বাড়ির দানপত্র রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব বহু মানুষ। 

    পরিবারের সদস্যদের মধ্যে জমি-বাড়ি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ০.৫ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি নেওয়া হয়। কিন্তু নয়া নিয়ম চালু হওয়ায় সম্পত্তির বাজার মূল্য বা ভ্যালুয়েশন যা’ই হোক, সর্বোচ্চ স্ট্যাম্প ডিউটি হল এক হাজার টাকা। সম্পত্তির মূল্য এক কোটি টাকা হলে আগে যেখানে ৫০ হাজার টাকা লাগত, এখন সেখানে লাগছে মাত্র এক হাজার টাকা। স্বামী, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, পুত্রবধূ, ভাই, বোন, নাতি ও নাতনিদের নামে দানপত্রের ক্ষেত্রে এই সুযোগ  দিচ্ছে রাজ্য। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে এই ধরনের রেজিস্ট্রেশন। কিন্তু এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে ধরা পড়ছে নাতি-নাতনিদের নামে দানপত্র রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা। এই সংখ্যা বেশি ধরা পড়ছে শহরতলিগুলিতে।

    এই বিষয়ে সমাজতাত্ত্বিক দেবদ্যুতি কর্মকার বলেন, স্বাভাবিকভাবেই পৈতৃক ভিটের সঙ্গে সকলেরই একটা আলাদা টান থাকে। কিন্তু আর্থিক কারণ থেকে শুরু করে সময়ের অভাব, অনেক ক্ষেত্রেই বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে তার রক্ষণাবেক্ষণ করা সত্যিই চ্যালেঞ্জের। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা পৈতৃক ভিটে প্রোমোটারদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে, প্রৌঢ়রা মনে করতে পারেন যে নাতি-নাতনিদের নামে সম্পত্তি লিখে দিলে তা আরও কিছু বছর অটুট থাকবে। এই চিন্তাভাবনা থেকেই তাঁদের এই পদক্ষেপ নেওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকতে পারে। 

    পরিবারের মধ্যে দানপত্র রেজিস্ট্রেশন ছাড়া, অন্যান্য ক্ষেত্রেও ১ জুলাই থেকে স্ট্যাম্প ডিউটির উপর ২ শতাংশ ছাড় তুলে দিয়েছে রাজ্য। তাতে জুলাই-আগস্ট মিলিয়ে গত দু’বছরে রেকর্ড রেজিস্ট্রেশন (দানপত্র, বিক্রয় কোবালা, লিজসহ অন্যান্য রেজিস্ট্রেশন মিলিয়ে মোট সংখ্যা ৪ লক্ষ) হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)