• ব্রেন টিউমারের রোগীকে নিয়ে এসএসকেএমে অসহায় আত্মীয়রা, ভর্তির জন্য কাতর অনুরোধ
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এসএসকেএম হাসপাতালে জরুরি বিভাগে রোগীদের ঢোকার মুখে ট্রলিতে শুয়ে রাজু দাস। তাঁকে ঘিরে উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যরা। কাউকে দেখলেই এগিয়ে এসে বলছেন, ‘একটু দেখুন না, যদি ভর্তির ব্যবস্থা করা যায়।’ কিন্তু কে করবেন সেই ব্যবস্থা? শুক্রবার সকাল দশটা থেকে রাজুর ভাই সুমিত দাস একটি বেডের জন্য হাসপাতালের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরছেন। বললেন, ‘আবার ইমার্জেন্সিতে গেলাম। সেখানে সবাই বিরক্ত হচ্ছেন। বললেন, আপনাকে তো বললাম বেড নেই। বারবার একই কথা বলছেন কেন?’ সুমিতের স্বর কাতর হয়ে এল। ‘এখন এই অসুস্থ মানুষটিকে নিয়ে কোথায় যাই বলুন তো?’ 

    রাজু দাস পেশায় ভ্যান চালক। বাগনানে থাকেন। তাঁর পরিজনরা জানান, ‘ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত ২৯ বছরের রাজু। ওঁরা গত সপ্তাহেও এসএসকেএমে এসেছিলেন। তখন ডাক্তার দেখেছিলেন। বলেছিলেন এমআরআই করতে হবে। ‘সেসব করে আজ ওপিডিতে দেখালাম। ওখানে বলল, ভর্তি করতে হবে। তারপর জরুরি বিভাগে গেলাম। তারা জানাল, বেড নেই। নিউরোতেও বলল, বেড নেই। আবার গেলাম জরুরি বিভাগে। ওরা বলল, দোতলায় যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে কাউকে পেলাম না’-বললেন রাজুর ভাই সুমিত। এই ভোগান্তির জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিকেই দায়ী করছেন রোগীর পরিজনরা। তাঁরা বললেন, ‘আমরা তো সকলেই ভেবেছিলাম, নবান্নতে বৈঠক হবে। তার সঙ্গে কর্মবিরতিও উঠে যাবে। কিন্তু কিছুই তো হল না। এভাবে কতদিন চলবে বুঝতে পারছি না।’ তবে এদিন জরুরি বিভাগে রোগী দেখাতে এসে অনেকেই বললেন, তাঁদের ভর্তি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এদিন সকাল থেকে এসএসকেএমের ওপিডিতে রোগীদের লম্বা লাইন চোখে পড়ল। ইএনটি, অর্থোপেডিক, কার্ডিওলজিতে দুপুর পর্যন্ত লম্বা লাইন। কেউ বললেন, একটানা দু’ঘণ্টা দাঁড়িয়ে। কেউ বললেন, তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে। সকলেরই অভিযোগ, ‘ডাক্তার কম এসেছেন। ফলে দাঁড়াতেই হবে। এটাই এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।’ ইএনটি বিভাগে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এক রোগীর কথায়, ‘মেদিনীপুর থেকে সকাল দশটা নাগাদ এসে লাইন দিয়েছি। এখন দেড়টা বাজতে যায়, ডাক্তার দেখাতে পারলাম না।’

    অন্যদিকে, আর জি কর হাসপাতালে এদিন জরুরি বিভাগে তুলনামূলক কম রোগী চোখে পড়েছে। বিকেলের দিকে ঠাকুরনগর থেকে এক মহিলা এসেছিলেন আর জি করে। তাঁদের পরিবারের বক্তব্য, সেখানকার হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছে কলকাতায়। আর জি করে জরুরি বিভাগে দেখানোর পর তাঁদের ভর্তি নেওয়া হয়েছে বলেই খবর। আর দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত রাজু বিশ্বাসের পরিজনরা এসএসকেএমেই দাঁড়িয়ে ভর্তির ব্যবস্থা কীভাবে হবে তার খোঁজখবর করে গেলেন।
  • Link to this news (বর্তমান)