• আজও কলকাতায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পুজোর বাজারে ধাক্কা 
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দিন পনেরো আগে পুজোয় বিক্রি করার জন্য ৭০ হাজার টাকার জামা-কাপড় মজুত করেছিলেন সঞ্জয় রাহা নামে হাতিবাগানের এক হকার। এখনও তাঁর ১০ হাজার টাকাও বেচাকেনা হয়নি। সঞ্জয়ের কথায়, এবার পুজোর বাজার শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে। আর জি করের জন্য রোজই মিটিং-মিছিল হচ্ছে। ফলে শহরতলির জনতা আর এমুখো হচ্ছেন না। তার উপর শুরু হয়েছে বৃষ্টি! অন্যান্য বছর পুজোর আগে শনি-রবিবার ভালো ব্যবসা হয়। এবছর পুরো মাঠে মারা যাবে মনে হচ্ছে। শুধু কি হকার বা ব্যবসায়ীদের ব্যবসা নয়, পুজো আয়োজনের মুখে গভীর নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ধাক্কা খাচ্ছে প্যান্ডেল তৈরির কাজ থেকে শুরু করে প্রতিমা তৈরিও। শুক্রবারের পর আজ, শনিবারও কলকাতায় ভারী বৃষ্টির আভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। 

    শুক্রবার সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার ছিল। রোদের দেখা মিলেছে বিক্ষিপ্তভাবে। বেলা গড়াতেই হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামে কলকাতায়। একই সঙ্গে শহর সংলগ্ন জেলা, শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে তুমুল বৃষ্টি হয়। বারাসত, বরানগর, বিধাননগর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, হুগলি সহ কলকাতার আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলে অতি-বৃষ্টি হয়েছে। কলকাতায় এদিনের বৃষ্টির জেরে জল জমার মতো পরিস্থিতি হয়নি বলে দাবি প্রশাসনের। তবে ভোগান্তি হয়েছে মানুষের। রাস্তায় বেরিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে সবাই। ধাক্কা খেয়েছে পুজোর বাজার। গড়িয়াহাটের এক ব্যবসায়ীর কথায়, গত এক সপ্তাহ ধরে বাজার মন্দা। দোকানে খদ্দেরের দেখা নেই। তিন-চারটে ছেলে এখানে কাজ করে। তাঁদের রোজের টাকা দিতে হয়। এভাবে আর কতদিন ধাক্কা সামলাব বুঝতে পারছি না। তার উপর এই বৃষ্টি। ওয়েদার রিপোর্ট দেখলাম, আগামী দু-তিনদিন এমন বৃষ্টি হবে। এবছর পুজোর সেলের কি হবে, ভেবে আতঙ্কিত হচ্ছি। অন্যদিকে পুজোর প্যান্ডেল তৈরির কাজেও সমস্যা তৈরি করেছ বৃষ্টি। হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজো উদ্যোক্তা শাশ্বত বসু বলেন, ‘গত ক’বছর ধরে তো বৃষ্টি নিয়েই পুজো করতে হয়। এই সমস্যা আমাদের অজানা নয়। আসলে এখন তো সব প্যান্ডেলই খোলামেলা। তাই মাথায় ত্রিপল টাঙিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু ঝমঝমিয়ে টানা বৃষ্টি হলে কাজে খানিক সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক।’

    এদিন দুপুরের পর থেকেই বারাসত, হাবড়া, অশোকনগর, দেগঙ্গা সর্বত্র ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হয়েছে। বারাকপুরে প্রবল বৃষ্টি হয় দুপুরে। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক বৃষ্টি হয় শিল্পাঞ্চল জুড়ে। কল্যাণী হাইওয়ের ধারে জল জমে। বরানগর ও কামারহাটির বিভিন্ন এলাকায় জল জমলেও তা নামতে শুরু করে। দক্ষিণ দমদমের একাধিক নিচু এলাকার রাস্তা ও রেলওয়ে আন্ডারপাসে জল জমে নরক যন্ত্রণা পোহাতে হয় নিত্যযাত্রীদের।  

    একই চিত্র হুগলিতে। দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা তুমুল বৃষ্টি হয়। তারপরও আকাশ মেঘলা ছিল। এদিনের বৃষ্টিতে মূলত সমস্যায় পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। এখন বিশ্বকর্মা মূর্তি তৈরির শেষপর্বের কাজ চলছে। রোদ ওঠেনি বলে প্রতিমার রং শুকিয়ে তুলতে সমস্যা হয়েছে। ডানকুনি, চন্দননগর, বৈদ্যবাটি সহ একাধিক এলাকায় বৃষ্টি চলাকালীন জল জমে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর অনেক জায়গা থেকে জল নামেনি বলে অভিযোগ। শহরের বিভিন্ন এলাকায় পথঘাটের দশা বেহাল। তার উপর বৃষ্টি আরও সমস্যা তৈরি করেছে। অন্যদিকে, দুপুরেই অন্ধকার হয়েছে উলুবেড়িয়া। শুরু হয় ঝড় ও ভারী বৃষ্টি। সমস্যায় পড়তে হয় মানুষকে।
  • Link to this news (বর্তমান)