আর জি করে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তাল গোটা রাজ্য। গত এক মাস ধরে রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি চালাচ্ছেন। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও প্রায় আড়াইশো জুনিয়ার ডাক্তার কর্মবিরতি চালাচ্ছেন। যার প্রভাব পড়েছে চিকিৎসা পরিষেবাতেও। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন পর্বে গত এক মাসে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রায় ৪০ শতাংশ কম রোগী চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন।
সেই সঙ্গে রোগী ভর্তির সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনই পরিকল্পিত অস্ত্রোপচার কমেছে। শুধু তাই নয়, এই আন্দোলন পর্বে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় দু’জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অধ্যক্ষ অমিত কুমার দাঁ বলেন, ‘‘আর জি করের ঘটনার বিচার চেয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের আন্দোলনকে আমরা সমর্থন জানিয়েছি। তবে আন্দোলনের প্রথম দিকে জুনিয়র ডাক্তাররা পুরোপুরি কর্মবিরতি চালালেও এখন বহির্বিভাগ এবং পরিকল্পিত অস্ত্রোপচার ছাড়া প্রায় সব জায়গায় কাজ করছেন।’’ ‘অভয়া ক্লিনিক’ করেও জুনিয়র চিকিৎসকেরা চিকিৎসা পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। অমিতবাবু বলেন, ‘‘তবে আন্দোলন-কর্মবিরতি চললে চিকিৎসা পরিষেবার ঘাটতি হবে সেটাই স্বাভাবিক। সেই ঘাটতিকে সিনিয়র ডাক্তারদের দিয়ে মেটানোর চেষ্টা চলছে।’’
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি অনাদি রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রথম দিকে আন্দোলনের যথেষ্টই প্রভাব চিকিৎসা পরিষেবায় পড়েছিল। বহির্বিভাগে যেখানে সাড়ে পাঁচ হাজার করে দৈনিক রোগী আসতেন সেখানে আন্দোলনের প্রথম দিকে এক-দেড় হাজার করে রোগী আসছিলেন। এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পথে। জুনিয়র ডাক্তাররা এখন অনেক জায়গায় কাজ করছেন। ইন্ডোরেও কাজ করছেন।’’
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাভাবিক সময়ে এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে দৈনিক সাড়ে পাঁচ হাজারের উপরে রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন। সেখানে মাসে প্রায় দেড় লক্ষের কাছাকাছি রোগীর বহির্বিভাগে চিকিৎসা করানো হয়। তবে আন্দোলন পর্বে গত এক মাসে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৮৫ হাজার রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা করিয়েছেন। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আন্দোলন পর্বে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রায় ৬০ হাজার রোগী কম এসেছে। একই সঙ্গে দৈনিক পরিকল্পিত অস্ত্রোপচার দৈনিক ৩০-৩৫ টি হত। কিন্তু আন্দোলনপর্বে দুই-তিনটেতে দাঁড়িয়েছিল। সেটা ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে বর্তমানে ১৮-২০টি পরিকল্পিত অস্ত্রোপচার হচ্ছে।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী কম আসছে, আবার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও বা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী কম। তার ব্যাখ্যা কী?সূত্রের খবর, জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই মেডিক্যাল কলেজে আসছেন না। আবার অনেকেই স্থানীয় স্তরে ব্লক বা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছেন। আাবার অনেকে গ্রামীণডাক্তারদেরও দেখাচ্ছেন।