‘বেণীমাধব’ নিয়ে আমারও সমালোচনা হয়েছিল, কিন্তু শালীনতার মাত্রা ছাড়ায়নি: লোপামুদ্রা
আনন্দবাজার | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আলোচনায় কবি জয় গোস্বামীর কবিতা ‘মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়’। একসময়ে এই কবিতাকে মানুষ চিনেছিল লোপামুদ্রা মিত্রের গান ‘বেণীমাধব’ হিসাবে। সম্প্রতি এই কবিতা নিজের মতো করে উপস্থাপন করেছেন অভিনেতা গৌতম হালদার। সেই ভিডিয়োর একটি অংশ নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। একের পর এক কটাক্ষ ধেয়ে এসেছে তাঁর দিকে। এ বার এই বিষয়ে মুখ খুললেন লোপামুদ্রা মিত্র।
এই কবিতাকে গান হিসেবে উপস্থাপন করে সেই সময়ে তিনিও সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন বলে জানান গায়িকা। কিন্তু সেই সমালোচনা কখনওই শালীনতার সীমা ছাড়ায়নি। গায়িকা তাঁর সমাজমাধ্যমে লেখেন, “একজন সৃজনশীল নাট্যব্যক্তিত্ব, মননশীল শিল্পী গৌতম হালদার তাঁর মতো করে উপস্থাপন করেছেন কবি জয় গোস্বামীর ‘মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়’। বহু দিন যাবৎ তিনি মঞ্চে নাটক, গান, কবিতা ও বিভিন্ন মাধ্যমে অভিনয় চর্চা করে চলেছেন। তাঁর নিজের শিল্প ভাবনা, তাঁর দীর্ঘদিনের গবেষণা রয়েছে তাঁর প্রতিটি কাজের মধ্যে। অনেক শ্রোতা-দর্শকের সেই উপস্থাপনা মনোজ্ঞ মনে হয়নি। সব কাজ সকলের ভাল না-ই লাগতে পারে। শিল্প-সাহিত্য, জীবনবোধ সবটাই, যেটা আমার কাছে ভাল, সেটা মন্দ তোমার কাছে। এই নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।”
১৯৯৬ সালে এই কবিতায় সুর দিয়েছিলেন সমীর চট্টোপাধ্যায়। গান গেয়েছিলেন লোপামুদ্রা। গায়িকার কথায়, “১৯৯৬ সালে আমার গাওয়া বেণীমাধব ভাল লাগেনি, এমন মানুষও অনেক আছেন। স্বয়ং কবি যে দিন প্রথম শুনেছিলেন গানটি, তাঁর প্রশ্ন ছিল, কেন একেবারে শেষে ‘বেণীমাধব, তোমার বাড়ি যাব’ ফিরিয়ে আনা হল?”
পরে যদিও কবি এই ভাবনা মেনে নিয়েছিলেন বলে লিখেছেন লোপামুদ্রা। গায়িকা সমালোচনার মান নিয়ে লিখেছেন, “আরও অনেক কবিতা-গানেরই সমালোচনার সামনে পড়েছিলাম আমরা। কিন্তু কোথাও অপমানিত হতে হয়নি। শালীনতাহানি হয়নি আমাদের। সেই সময়ে তো সমাজমাধ্যম ছিল না। থাকলে কী ঘটত জানি না!”
সমাজমাধ্যমে যাঁরা ট্রোলার বা অনবরত তির্যক মন্তব্য করে থাকেন, তাঁদের উদ্দেশে লোপামুদ্রা লেখেন, “আমার আজকের এই লেখার কারণ হল, শিল্পী, সাহিত্যিক, গায়ক, অভিনেতা, যাঁরা দীর্ঘ দিন একটা সাধনার মধ্যে দিয়ে নিজেদের পায়ের তলার জমি তৈরি করেছেন, সম্মান ও শ্রদ্ধার আসন তৈরি করেছেন, তাঁদের তো বটেই, এমনকি আমরা কোনও মানুষকেই প্রকাশ্যে এই ভাবে অপমান করতে পারি না। অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলতে পারি না। আমরা আলোচনা করতে পারি, তাঁর উপস্থাপনা নিয়ে। কিন্তু, এ রকম উচ্চমানের শিল্পীকে এ ভাবে কটূক্তি করতে পারি না।”
এই পোস্টের জন্য তাঁকেও ট্রোল করা হতে পারে বলে আশঙ্কা লোপামুদ্রার। কিন্তু সেই তোয়াক্কা না করেই গায়িকা পোস্টের শেষে প্রশ্ন রেখেছেন, “শালীনতা, সম্মান, ভাষার নিয়ন্ত্রণ, সমীহ, শ্রদ্ধা ইত্যাদি শব্দ কি আমরা পুরোপুরি ভুলে গেলাম? আমরা কি অসভ্য হয়ে উঠছি ক্রমশ? কষ্ট হচ্ছে মেনে নিতে।”