• হামলার ছক ধর্নামঞ্চে? বিতর্ক অডিয়ো ক্লিপিংয়ে
    এই সময় | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলার জন্য আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর হামলার ছক কষা হচ্ছে বলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করলেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। এই ‘চক্রান্তের’ সঙ্গে দু’-একটি বাম এবং অতিবাম সংগঠন জড়িত বলে তাঁর দাবি। শুক্রবার কুণাল বলেন, ‘বৃহস্পতিবার যখন জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের প্রক্রিয়া চলছিল, তখন দু’-তিনটে শিবির থেকে রাজ্য সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলতে হামলার ছক হয়েছিল ডাক্তারদের উপর। যাতে গোটা দায়টা রাজ্য সরকারের উপর চাপানো যায়।’তাই অবিলম্বে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার দাবিও জানিয়েছেন কুণাল। অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে একটি অডিয়ো রেকর্ডও এ দিন প্রকাশ করেন তিনি। যদিও এই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’। কুণালের এই অডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরই বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। সেই মামলায় একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

    এই অডিয়ো রেকর্ডে দু’টি কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। সেখানে পুরুষ কণ্ঠে একজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘সাহেব অর্ডার করেছে সল্টলেক উড়িয়ে দেওয়ার জন্য।’ আর একটি পুরুষ কণ্ঠস্বরে শোনা যাচ্ছে, ‘অর্ডার হলে করে দে। যখন বলছে, তখন কিছু একটা ভেবেই তো বলছে।’ জবাবে প্রথম ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘এত বছর এই কাজ করছি। কিন্তু এটা করাটা কি ঠিক হবে? ওরা তো লোকের জীবন বাঁচায়। নিজের বিবেকে লাগছে, এখনও তো জানোয়ার হয়ে যাইনি।’

    অডিয়ো ক্লিপিং শুনিয়ে কুণালের সংযোজন, ‘ভাগ্যিস ওদের মধ্যে মতান্তর ঘটেছিল। না হলে বৃহস্পতিবার কোনও বড়সড় অঘটন ঘটে যেত।’ এর প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক সৌমদীপ রায় বলেন, ‘১৪ অগস্ট রাতে আরজি কর হাসপাতালে যে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, তার দায় পুলিশের। সল্টলেকে আমাদের উপর হামলা হলে তার দায়ও পুলিশের উপরেই বর্তাবে।’ কিন্তু কে বা কারা এই হামলার ছক কষছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

    বিরোধীদের অবশ্য দাবি, আরজি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে যে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই এটা তৃণমূলের নয়া কৌশল। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘গোটা রাজ্য যখন বিচার চাইছে, তার মূল বিষয় থেকে অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতে এই অডিয়ো রেকর্ড শাসক দলেরই কোনও গভীর চক্রান্ত কি না, সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’

    বিজেপি আবার অতিবামদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসূত্র নিয়ে খোঁচা দিয়েছে। দলের রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘পুলিশ এবং শাসক দল যৌথভাবে ডাক্তারদের আন্দোলনকে বিভিন্ন ভাবে ভাঙার চেষ্টা করছে। লোকসভা ভোটের আগে এই অতিবামরাই তো তৃণমূলের হয়ে ব্যাট হাতে নেমেছিলেন।’

    কোথা থেকে এল এই অডিয়ো ক্লিপিং?

    কুণালের দাবি, ‘ওই বাম-অতিবাম শিবির থেকেই এগুলি আসছে। সবাই গন্ডগোল চাইছেন না। কলকাতার বাইরে লোক নিয়ে এসে জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। হয়তো বৃহস্পতিবার তারা করতে পারেনি। কিন্তু ভবিষ্যতে করবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?’

    গত মঙ্গলবার থেকে সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে পাঁচদফা দাবি নিয়ে ধর্নায় বসেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ সেখানে সামিল হচ্ছেন। পতাকা ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও ভিড় জমাচ্ছেন সেখানে। সেই প্রসঙ্গ টেনে কুণাল বলেন, ‘বলা হচ্ছে অরাজনৈতিক মঞ্চ। অথচ জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশকে বিজেপি অফিসে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। সিপিএমের লোকজনও ঘোরাফেরা করছে। নকশালদেরও কাউকে কাউকে দেখা যাচ্ছে।’

    জবাবে জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের নেতা অনিকেত মাহাতোর যুক্তি, ‘আমাদের এই আন্দোলনে যাঁরা আছেন, তাঁদের নিজস্ব রাজনৈতিক পরিচয় থাকতেই পারে। কিন্তু সেই দলীয় রাজনীতির যে সুর, তার সঙ্গে এই আন্দোলনের সুর মেলে না। এই আন্দোলন পুরোপুরি অরাজনৈতিক।’
  • Link to this news (এই সময়)