২০১৪ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া 'হোক কলরব' আন্দোলন এক অন্য মাত্রায় চলে গেলে সরাসরি মাঠে নামেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের কাছে সরাসরি এসে কথা বলেন তিনি। ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে তাঁর হস্তক্ষেপে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে ইস্তফা দেন অভিজিৎ চক্রবর্তী। একইভাবে শনিবারে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ডাক্তারদের কাছে এসে তিনি বলেন, "আপনারা আমাদের ঘরের ভাইবোন। আমি কোনও অবিচার হতে দেব না। সব হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি নতুন করে তৈরি করা হবে। তাতে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, পুলিশ থাকবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরজি করের রোগী কল্যাণ সমিতি আমি ভেঙে দিলাম। নতুন করে তৈরি করা হবে। বাকি আপনাদের যা দাবি আছে, যদি সত্যি কেউ দোষী হয়, তারা শাস্তি পাবে।" রোগীকল্যাণ সমিতির একাধিক দুর্নীতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছিলেন ডাক্তাররা, নবান্নের সাংবাদিক সম্মেলন থেকেই তিনি ঘোষণা করেছিলেন সেই সমিতি ভেঙে ফেলার। এবার ডাক্তারদের সামনে থেকেই প্রত্যেক হাসপাতালেই সেই সমিতি ভেঙে ফেলার ঘোষণা করলেন তিনি। রাজনৈতিক মহলে আলোচনা উঠছে, সোমবারই হয়ত মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে এই বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করতে পারেন। শোনা যাচ্ছে, ডাক্তারদের প্রত্যেকটা দাবিই তিনি বিবেচনা করে দেখবেন। পাশপাশি সরকার ঘনিষ্ঠ একাধিক ডাক্তারের বরখাস্তের দাবি জানিয়ে এসেছিলেন ডাক্তাররা। তাঁদের প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "কেউ আমার বন্ধু বা শত্রু নয়। যাঁদের আমার বন্ধু বলছেন, আমি তাঁদের চিনিই না। প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁরা এসেছেন। সাধ্যমতো পদক্ষেপের চেষ্টা করব। আপনারা কাজে ফিরুন। আমি কোনও আপনাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করব না।" ডাক্তারদের আন্দোলনে দাঁড়িয়ে থেকে তিনি আরও বলেন, "এখন আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এখানে আসিনি। আন্দোলনের সমব্যথী হিসাবে এসেছি। বড় দিদি এসেছি। আমাকে সময় দিন। ভাল থাকুন। আপনাদের কাছে আসা মানে নিজেকে ছোট করা নয়। বড় করা। এটা আমার শেষ চেষ্টা।" এই বক্তব্যের পরেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকেই। অনেকে লিখেছেন, 'তিনি জানেন বিষয়গুলি কখন, কিভাবে মোকাবিলা করতে হয়।'
ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ করবেন না বলে, তিনি ডাক্তারদের কাজে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, "সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা চলছে। কোনও পদক্ষেপ আপনাদের বিরুদ্ধে করা হবে না।" তিনি আরও বলেন, "যদি আপনারা কাজে ফিরতে চান, আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করব। আমি একা সরকার চালাই না। সকলের সঙ্গে আলোচনা করব। যদি কেউ দোষী হন, শাস্তি পাবেন। সিবিআইকে অনুরোধ করব, দোষীদের ফাঁসি হোক। কেউ দোষী থাকলে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেব। এটুকু বলতে এসেছি।"
তথ্যসুত্র: শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়