সেখানে পৌঁছে মমতা গভীর আবেগের সঙ্গে বললেন, 'আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আসিনি, আমি দিদি হিসেবে এসেছি। আমি যখন এসেছি কাজ করবই। এই আন্দোলনে রোদে-বৃষ্টিতে আপনাদের খুব কষ্ট হয়েছে। আমিও আপনাদের জন্য কষ্ট পেয়েছি। আপনাদের দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে ভাবব। আমাকে একটু সময় দিন। যারা দোষ করেছে তারা শাস্তি পাবে। আপনারা কাজে যোগদান করুন। সিবিআইকে বলব দ্রুত তদন্ত শেষ করব। কোনও ডাক্তারেরে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নয়। আমি অফিসারদের সঙ্গে কথা বলব। আমার এটা শেষ চেষ্টা।'
পাশাপাশি একেবারে যেন দিদির মতো ঘরোয়া সুরে তিনি জুনিয়রর ডাক্তারদের অনুরোধ করেন, এখানে যে যা খাবার দিচ্ছে সেটা খাবেন না।'
তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সম্ভবত রাজ্যের সমস্ত রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত। আরজি কর প্রসঙ্গে মমতা ঘোষণা করেন, 'আরজি কর রোগী কল্যাণ সমিতি' ভেঙে দিলাম। আর তখনই তিনি রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতালের রোগী কল্য়াণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করে বলেন, এবার থেকে রোগী কল্যাণ সমিতিতে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার ও নার্সও থাকবেন।
এদিকে নিজেদের প্রায় ৩৪ তম দিনের আন্দোলনের দিনে এবং ধর্নাস্থলে মুখ্যমন্ত্রীকে পেয়ে স্পষ্টতই উল্লসিত আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। প্রথমে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে আসতে দেখেই 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' স্লোগান দেন। পরে মুখ্যমন্ত্রী নিকটবর্তী হলে সকলে তাঁর কথা শোনেন। পরে ছাত্রদের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর আসাকে স্বাগত জানাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এখানে আসা সদর্থক। তাঁরা তাঁদের দাবি নিয়ে এবার দ্রুত আলোচনায় বসবেন।
এদিকে সিবিআইয়ের তদন্তও এগিয়ে চলেছে। এবার জানা গেল আরজি কর কাণ্ডের অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের মোবাইলের কল রেকর্ডস সংক্রান্ত তথ্য। জানা গিয়েছে, সাধারণত রাত ৯টার পরে আরজি কর চত্বরে থাকত না সঞ্জয়! কিন্তু আরজি কর কাণ্ডের তদন্তকারীদের দাবি, অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডস ঘেঁটে জানা যাচ্ছে ঘটনার আগের কয়েকদিন ধরেই সঞ্জয়কে রাত ১২টা পর্যন্ত আরজি করে দেখা যাচ্ছিল! সঞ্জয়ের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডস ঘেঁটেই তার এই রোজনামচার হদিস পেয়েছে সিবিআই!
পাশাপাশি জানা গিয়েছে আর এক ভয়ংকর তথ্য! ৮ অগস্ট মধ্যরাতে ও ভোরের দিকেও এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়েছিল অভিযুক্ত সঞ্জয়ের। শুধু তাই নয়, এটা মোটামুটি স্পষ্ট যে, ওই ব্যক্তির সঙ্গেই সঞ্জয়ের তদন্তের দিক থেকে দুই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ফোনে কথা হয়-- এক, সেই রাতে আরজি করে ঢোকার আগে এবং দুই, সেখান থেকে বেরনোর আগে! কী ভাবে জানা গেল এটা? পলিগ্রাফ টেস্ট থেকেই। পলিগ্রাফ টেস্টই এমন ইঙ্গিত দিয়েছিল সঞ্জয়। তবে, সেদিন যা-যা সে বলেছে, সে বিষয়ে তার মুখ থেকে সর্বাংশে সত্য কথা জানতে সিবিআই নার্কো টোস্ট করতে চেয়েছিল। তবে নার্কো টেস্টে সঞ্জয় রাজি হয়নি। আর, যার নার্কো হবে, সে সম্মতি না দিলে নার্কো করা যায় না, করাটা অসাংবিধানিক। তাই কোর্টও সিবিআইকে সঞ্জয়ের নার্কো পরীক্ষার অনুমতি দেয়নি! তাহলে?