সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অচলাবস্থা কাটাতে নজিরবিহীন পদক্ষেপ। স্বাস্থ্যভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের ধরনা মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান আন্দোলনকারীদের। বার বার তাঁদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নয়, বড় দিদির মতো এসেছি।”
তিনি বলেন, “আপনাদের অনুরোধ, দয়া করে চুপ করুন। আমি আপনাদের আন্দোলনকে সমর্থন করি। আমি আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাই। আমি ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা লোক। আমি জানি আমার পদটা বড় কথা নয়। কাল সারারাত ঝড়-জল হয়েছে, আপনাদের যেমন কষ্ট হয়েছে। আমারও কষ্ট হয়েছে। এই ঝড়জলের মধ্যে আপনারা যেভাবে বসে আছেন আমারও কষ্ট হয়েছে। রাতের পর রাত আমিও ঘুমাইনি। পাহারাদের মতো আমাকেও জেগে থাকতে হয়। আপনারা অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আর কষ্ট না করে যদি আপনারা কাজে ফিরতে চান, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আপনাদের দাবিগুলো সহানুভূতির সঙ্গে খতিয়ে দেখব। ভাবব, চিন্তা করব। যদি কেউ দোষী হয়, সে শাস্তি পাবেই।”
তিনি আরও বলেন, “আমি চাই তিলোত্তমার বিচার হোক। ডাক্তারদের কাছে আবেদন জানাব, আমাকে একটু সময় দিন। যদি আপনাদের আমার উপর আস্থা, ভরসা থাকে। আমি মনে করি অনেক মানুষও মারা যাচ্ছে, দয়া করে কাজে যোগদান করুন। আমি বলতে পারি, আপনাদের উপর কোনও অবিচার করব না। হাসপাতালের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ শুরু করে দিয়েছি।” এর পর রাজ্যের প্রত্যেক হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার মতো বড়সড় সিদ্ধান্তের কথা জানান। বলেন, “রোগীকল্যাণ সমিতিতে অধ্যক্ষদের চেয়ারম্যান করব। তাতে জুনিয়র ডাক্তার, নার্স, পুলিশও থাকবে। সব মেডিক্যাল কলেজে রোগীকল্যাণ সমিতি ভেঙে দিলাম। আপনাদের বাকি যা দাবি আছে, তা ভাবা হবে। দোষীরা কেউ আমার বন্ধু নয়। যাঁরা ভাবছেন, তারা আমার বন্ধু। আমি তাদের চিনিই না। কোনওভাবে এই খুন, দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাদের বিরুদ্ধে সাধ্যমতো ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব। আপনারা আমার ভাইবোন। নিজেদের মধ্যে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিন। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, কোনও ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব না। আপনারা ছাড়া সিনিয়র ডাক্তাররা অচল। আপনাদের সহযোদ্ধা হিসাবে ধরনা মঞ্চে যেমন আসতে পেরেছি, তেমনই ভরসা রাখলে আস্তে আস্তে সমস্ত দাবি খতিয়ে দেখব।”
তিনি আরও বলেন, “সুপ্রিম কোর্টে কেস চলছে, ১৭ তারিখ শুনানি আছে। আমি চাই না কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নন, বড় দিদির মতো আপনাদের কাছে এসেছি। আমি সমব্যথী, সমসাথী। আমি দাবি মেটানোর চেষ্টা করব। সময় দিন। আপনাদের কাছে আসা মানে নিজেকে ছোট করা নয়। বড় করা। আপনারা সুবিচার পান। অবিচার হবে না।” উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ, ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে তাঁকে। তার পর থেকেই কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে শামিল জুনিয়র চিকিৎসকরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধরনা মঞ্চে উপস্থিতির পর কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে আন্দোলনকারীরা পিছু হঠেন কিনা, সেটাই এখন দেখার।